আজকের স্টার্টআপই হবে আগামী দিনের ইউনিকর্ন
বিকাশ, পাঠাও, চালডালের মতো দেশি-বিদেশি উদ্যোগ ছোট থেকেই শুরু হয়েছিল। সমাজের উদীয়মান সমস্যার নতুন সমাধান দিয়ে তারা এখন বড় উদ্যোক্তা। চাকরি না করে স্টার্টআপ হিসেবে এখন নাম লেখাচ্ছেন। তাদের কেউ কেউ হবে দেশের বড় ‘ইউনিকর্ন’ স্টার্টআপ বা ১০ হাজার কোটি টাকার কোম্পানি। সেজন্য হাল না ছেড়ে জেগে থাকতে হবে, লেগে থাকতে হবে।
শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার সোবহানবাগে ড্যাফোডিল টাওয়ারে গ্লোবাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ নেটওয়ার্কের বাংলাদেশ ক্যাম্পাসে এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। স্মার্ট বাংলাদেশ এক্সিলারেটর কর্মসূচির কোহর্ট অনবোডিং শীর্ষক ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ডিজিটাল উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবন ইকোসিস্টেম উন্নয়ন (ডিড) প্রকল্প। নতুন উদ্যোক্তাদের ধারণা থেকে শুরু করে বৃদ্ধি পর্যায়ের ডিজিটাল স্টার্টআপসমূহের ব্যবসায়কে বিকশিত ও সফল করার অংশ হিসেবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যেখানে ১৭৫ জন উদ্যোক্তা নিয়ে আরো সাতটি কোহর্টের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ডিড প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক ড. মো. মনসুর আলম। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (গ্রেড-১) জি এস এম জাফরউল্লাহ্, এনডিসি। গ্লোবাল এন্ট্রেপ্রেনিউরশিপ নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে. এম. হাসান রিপনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ডিড প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক ড. মো. মনসুর আলম, বাংলাদেশ ভেনচার ক্যাপিটাল লিমিটেডের পরামর্শক ড. নুরুজ্জামান, বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সিনিয়র প্রাইভেট সেক্টর স্পেশালিস্ট হোসনে ফেরদৌস সুমি, ডিড প্রকল্পের ইনোভেশন ও কমার্শিয়াল স্পেশালিষ্ট এ.এন.এম সফিকুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জি এস এম জাফরউল্লাহ্ বলেন, ‘বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রেই শক্তিশালী দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। অনেক দেশ কোভিড মোকাবিলায় সফল হতে পারেনি। আমরা সেই জাতি যারা কোভিড মোকাবিলায় এক দিনেই কোটি মানুষকে টিকা দিয়েছি। আমরাই পারি, আমরাই পারবো। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড কাজে লাগিয়ে তরুণ উদ্যোক্তারাই দেশের অর্থনীতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৫তম অর্থনীতির দেশ। ডিজিটাল উদ্যোক্তাদের ধাপে ধাপে প্রি-সিড, সিড ফান্ড, কোম্পানি গঠন, আইপি রেজিস্ট্রেশন, মেন্টরিংসহ বিপণন সহায়তা দিয়ে শুধু দেশের বাজারে নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও শক্ত অবস্থান তৈরিতে সহায়তা করা হবে। আপনারা জেগে থাকুন, লেগে থাকুন।’
বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সিনিয়র প্রাইভেট সেক্টর স্পেশালিস্ট হোসনে ফেরদৌস সুমি বলেন, ‘আমাদের প্রাইড প্রকল্পে স্মার্ট উদ্যোক্তা তৈরির কার্যক্রমটি বৃহৎ এই প্রকল্পের একটি ছোট অংশ। তবে এই ছোট অংশটিই অনেক ইমপ্যাক্টফুল। এই প্রকল্পে ডিজিটাল স্টার্টআপ, শিল্প উন্নয়ন, বেসরকারি বিনিয়োগ নিয়ে আরো অনেক কাজ আছে। বাংলাদেশে প্রতিবছর ২০ লাখের বেশি তরুণ চাকরির বাজারে ঢুকছে। তাদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা বেশ কঠিন। এর মধ্যে এসএমই উদ্যোক্তারাই ৮০ শতাংশ কর্মসংস্থান তৈরি করছে। কর্মসংস্থানের ইঞ্জিনের চাবিকাঠি আসলে স্টার্টআপদের হাতে। যারা স্টার্টআপ হিসেবে শুরু করেছেন বা করবে তাদের কাছ থেকে দেশের প্রত্যাশা সবেচেয়ে বেশি। এই কর্মসূচিতে যেসব দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ আছেন, তারা তরুণদের উদ্যোক্তা হিসেবে বিকশিত হতে জ্ঞান, প্রশিক্ষণ, মেন্টরিং, নেটওয়ার্কিংসহ যাবতীয় সহায়তা দেবেন। নিজেকে বিকশিত করার জন্য এই কর্মসূচি থেকে সর্বোচ্চটুকু নেবেন আশা করি। ’
ডিড প্রকল্পের ইনোভেশন ও কমার্শিয়াল স্পেশালিস্ট এ.এন.এম সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘স্টার্টআপরা সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগে অর্থসহ নানা সহায়তা পাচ্ছে। কিন্তু একজন উদ্যোক্তা তার পুরো যাত্রাপথটি কিভাবে পাড়ি দেবে আমরা সেটি শেখাচ্ছি। কোন উদ্যোগের আইডিয়েশন থেকে কমার্শিয়ালাইজেশন পর্যন্ত-পুরো যাত্রা পথ নিয়ে সরকারি উদ্যোগের ঘাটতি ছিল সেটাই ডিড প্রকল্পের মাধ্যমে নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ ও বিশ্বব্যাংক। এর মাধ্যমে আমরা দেশে একটি ইনোভেশন ইকোসিস্টেম গড়তে চাই। বিশ্ববিদ্যালয় ইনোভেশন হাবে মেধাবি শিক্ষকদের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত হয়ে এবং স্টার্টআপ স্কেল কর্মসূচির মাধ্যমে বিকশিত হয়ে একেকজন স্টার্টআপ যাতে ইউনিকর্ন হিসেবে আবির্ভূত হতে পারেন সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।’
স্মার্ট বাংলাদেশ এক্সিলারেটর কার্যক্রমের জাতীয় পর্যায়ের কর্মসূচি সমন্বয়ক মো. আরিফুর রহমান বলেন, স্টার্টআপ স্কেলআপ কর্মসূচির আওতায় এক হাজারের বেশি ডিজিটাল স্টার্টআপ ফাউন্ডারদের নিবিড় প্রশিক্ষণ, ব্যবসায় পরিকল্পনা ও বৃদ্ধি সহায়তা প্রদান করা হবে।