উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি, গণহত্যার বর্ণনা তুলে ধরলেন রোহিঙ্গারা
![](https://miprobashi.com/wp-content/uploads/2023/07/prothomalo-bangla_2023-07_f2053fc8-3324-4cff-a951-803263864811_COXS_BAZAR_DH0497_20230706_ICC_1_JPG.webp)
লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-১) আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রধান কৌঁসুলি করিম আসাদ আহমাদ খান। বৃহস্পতিবার দুপুরে কক্সবাজারের উখিয়ায়
কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির পরিদর্শন করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম আসাদ আহমাদ খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দলটি কক্সবাজার শহর থেকে সড়কপথে ৫২ কিলোমিটার দূরের উখিয়ার লম্বাশিয়া (ক্যাম্প-১) আশ্রয়শিবিরে পৌঁছায়। এরপর সেখানকার ক্যাম্প দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কার্যালয়ে টানা দেড় ঘণ্টা কয়েকজন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের সঙ্গে কথা বলে দলটি।
আইসিসি দলের সঙ্গে আছেন কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ খালিদ হোসাইন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বাসিন্দা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো অত্যাচার, নির্যাতন ও নিপীড়নের তথ্যানুসন্ধানের জন্য আশ্রয়শিবির পরিদর্শনে এসেছেন নেদারল্যান্ডসের হেগভিত্তিক আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি করিম আসাদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের দল। আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরের বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। সেখানে দলের সদস্যরা ছাড়া অন্য কারও যাতায়াত সীমিত রাখা হয়। দুপুরে ক্যাম্প-১২ আশ্রয়শিবিরে পৌঁছে আরও কয়েকজন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের সঙ্গে কথা বলেন আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি। কিন্তু রোহিঙ্গারা কী বলেছেন, তা তাঁর জানা নেই।
দুপুরে প্রথম বৈঠক শেষে লম্বাশিয়া আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ জুবাইর বলেন, আইসিসির প্রধান কৌঁসুলির সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য ক্যাম্প ইনচার্জের কার্যালয়ে তিনিসহ ১৩ জন রোহিঙ্গাকে ডাকা হয়। যাঁরা ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমার সেনাবাহিনী কর্তৃক অত্যাচার, নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন। কিন্তু আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি কথা বলেন পাঁচজনের সঙ্গে। এর মধ্যে তিনজন নারী মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গুলিতে স্বজন হারানোর স্মৃতি, ঘরবাড়ি আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনা এবং রোহিঙ্গা মেয়েদের অপহরণের পর ধর্ষণ ও ধনসম্পদ লুটের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন রোহিঙ্গা নারী জানান, রাখাইনে রোহিঙ্গা নিপীড়নের ঘটনা জানার পাশাপাশি আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি তাঁদের (রোহিঙ্গা নারী) কাছে জানতে চেয়েছেন, উখিয়ার আশ্রয়শিবিরের বর্তমান পরিস্থিতি কেমন? জবাবে রোহিঙ্গারা বলেন, প্রায় প্রতিদিন খুন–খারাবির ঘটনা ঘটছে। চীনের মধ্যস্থতায় সম্প্রতি প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ শুরু হলেও মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার পরিবেশ নেই। বিকেলে আইসিসির প্রধান কৌঁসুলির আশ্রয়শিবির থেকে কক্সবাজার ফিরে আসার কথা রয়েছে।
গতকাল বুধবার বিকেলে ঢাকা থেকে উড়োজাহাজে কক্সবাজার বিমানবন্দর পৌঁছান আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি। এরপর বিমানবন্দর থেকে সরাসরি চলে যান সমুদ্রসৈকতসংলগ্ন শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ে। সেখানে আরআরআরসি মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক করেন।
মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে তাঁর কার্যালয়ে আইসিসির প্রধান কৌঁসুলির সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি, আশ্রয়শিবিরের পরিবেশ ও পরিস্থিতি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা সেবা ও খাদ্যসহায়তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের খাদ্যসহায়তা কমিয়ে দেওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি।
বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে।
২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইনে সংগঠিত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমান নির্যাতন ও গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে প্রক্রিয়া শুরু করে আইসিসি। আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চালানো নির্যাতনের ব্যাপ্তি নিয়ে তদন্ত করছে আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি।