কী হচ্ছে, কী হবে, জরুরি অবস্থাই কি সমাধান?
রাজনীতি এবং অর্থনীতি। দু’টিই খুব গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করছে বাংলাদেশে। তবে সামনের দিনগুলো আরও অনেক বেশি উত্তেজনাময় ও শ্বাসরুদ্ধকর। অভাবনীয় এক অধ্যায়ে প্রবেশ করছি আমরা। কথা হচ্ছে, এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ কি আগে কখনো পড়েনি? উত্তর হচ্ছে ‘হ্যা’ এবং ‘না’। অর্থনৈতিক বিপর্যয়। রাজপথে অস্থিরতা, হাঙ্গামা। পর্দার আড়ালে নানা খেলা। এসব কোনোটাই অভিনব নয় বাংলাদেশে। তবে যেটি একেবারেই নতুন তা হচ্ছে, বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশ্যে অবস্থান ও অ্যাকশন।
বিজ্ঞাপন এমনটা আগে কখনো দেখা যায়নি। পর্দার আড়ালে কি আরও কিছু ঘটছে? এমন প্রশ্নও উঠছে। এই যখন অবস্থা তখন গুজবে ভাসছে দেশ। সোশ্যাল মিডিয়ায় আসছে একের পর এক তথ্য। কোনটি সত্য, কোনটি মিথ্যা ঠাওর করা কঠিন।
অর্থনীতির স্বাস্থ্য এমনিতে ভালো নয়। রিজার্ভ কমছে প্রতিদিনই। বিদেশি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে। মূল্যস্ফীতির চাপে জেরবার মানুষের জীবন। মধ্য ও নিম্নবিত্ত যে কতোটা কষ্টে আছে তা অনেকেই অনুধাবন করতে অক্ষম। অর্থনীতি দেখভালের দায়িত্ব যাদের তাদের অবশ্য এসব খুব একটা ছুঁয়ে যাচ্ছে না। তারা আছেন নিজেদের মতো। বেশিরভাগ সময়ই আড়ালে। দ্রব্যমূল্যের কোনো প্রভাব তাদের জীবনে হয়তো নেই।
রাজনীতির জন্য অক্টোবর মাসকে বলা হচ্ছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমনিতে দুই পক্ষই অনড়। নানা আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও সরকার যেকোনো মূল্যে জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করতে চায়। নির্বাচন কমিশনও সেভাবেই এগুচ্ছে। তবে এর আগে অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তায় গুরুত্বপূর্ণ কোনো ঘোষণা আসতে পারে এমন আলোচনাও রয়েছে। গুঞ্জন রয়েছে জরুরি অবস্থা জারির মাধ্যমেও সংকটের সমাধান খোঁজা হতে পারে। কেউ কেউ মনে করেন এটি সাংবিধানিক বিকল্প ব্যবস্থা। যদিও আন্তর্জাতিক সমালোচনার বিষয়টি তখনও সামনে আসতে পারে। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো প্রতিদিনই কোনো না কোনো কর্মসূচি পালন করছে। যদিও তারা সরকারের ওপর খুব বেশি চাপ প্রয়োগ করতে পেরেছে এমনটা নয়। সমাবেশ ও রোডমার্চের মতো কর্মসূচিই পালিত হচ্ছে এখনো। বিএনপি’র একাধিক সূত্র বলছে, খুব দ্রুতই বাঁকবদলের মতো কর্মসূচি আসছে। বিশেষ করে ঢাকা অচল করে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে বিরোধীরা। অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে এ ধরনের কর্মসূচি পালিত হতে পারে। বিএনপি যেকোনো মূল্যে আগামী মাসেই তাদের আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে চায়। দলটির নেতারা মনে করেন, আন্তর্জাতিকভাবে সরকার এখন অনেকটাই চাপে রয়েছে। তাছাড়া, কার্যকর আন্দোলনের সময়ও ফুরিয়ে আসছে। যদিও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে দলটিতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। গত ৫০ দিনেও তার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। চিকিৎসকরাও এ ব্যাপারে আশার কথা শোনাচ্ছেন না।
এ পরিস্থিতিতে তাকে বিদেশে নেয়ার ব্যাপারে তৎপরতা চালাচ্ছে পরিবার। এ ব্যাপারে ইতিবাচক অগ্রগতির আশা করছে তারা। সরকার বিরোধী আন্দোলনে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনের মতো দলগুলোও অক্টোবরে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
রাজনীতির প্রধান দুই পক্ষই যখন অনড় তখন আন্তর্জাতিক চাপের বিষয়টিই প্রধান আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। অনেকে মনে করেন, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন এবং রাজনীতি কোন পথে যাবে এটি আসলে আন্তর্জাতিক রাজনীতিই ঠিক করে দেবে। একজন বিশ্লেষক বলেন, বাংলাদেশে ১৯৯০, ৯৬ এবং ২০০৭ সালের পরিবর্তনের পেছনে আন্তর্জাতিক শক্তি মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। বর্তমান বিশ্ব রাজনীতির পরিস্থিতি যদিও কিছুটা আলাদা। তবে বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অতীতে কখনো বাংলাদেশ নিয়ে এতটা সিরিয়াস দেখা যায়নি। এর বাইরে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে বাংলাদেশ নিয়ে একটি প্রস্তাব পাস করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বড় পরিসরে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ান পার্লামেন্টেও বাংলাদেশ ইস্যুটি উত্থাপিত হয়েছে। এরআগে খবর বেরিয়েছিল, বাংলাদেশের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রকে নীতি পরিবর্তনে অনুরোধ জানিয়েছে ভারত। তবে আদৌ ভারত এ অনুরোধ জানিয়েছিল কি-না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অনুরোধ জানালেও তার যে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি, তা যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ পদক্ষেপেও বোঝা যায়।
অর্থনৈতিক নাজুক পরিস্থিতি। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক শক্তির শক্ত পদক্ষেপ। সরকার এবং বিরোধীদের অনড় অবস্থান। সব মিলিয়ে অনিশ্চিত এক অধ্যায়েই প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। অনেকে এটাও বলছেন, অক্টোবরেই আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে। সে যাই হোক, শেষ পর্যন্ত জনগণই ভুক্তভোগী হতে পারে।
সাম্প্রতিক সময়ে রাতের ইউটিউব শো’তে এক আলোচিত নাম শিক্ষাবিদ ও বিশ্লেষক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। তিনি একটি সহযোগী দৈনিকে লিখেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে সব চাবিকাঠি রয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে আমাদের ওপর যে ধসটা নামতে যাচ্ছে তা আমাদের জন্য কঠিন সময় বয়ে আনতে পারে। তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়ার যে সংস্কৃতি সরকারের মধ্যে দেখা যাচ্ছে সেটি অনুবর্তী হয়ে হয়তো আমাদের ওপরই পড়বে। আমাদের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ যেভাবে স্যাংশনকে উড়িয়ে দিচ্ছেন সেটি কোনোভাবেই বাস্তবসম্মত নয়। মার্কিন স্যাংশন মারাত্মক প্রভাব ফেলবে আমাদের অর্থনীতিতে, আমাদের সংস্কৃতিতে এবং আমাদের রাজনীতিতে। প্রভাব পড়বে আমাদের নির্বাচনী কাঠামোতেও। মুখে যে যাই বলুক না কেন, ইতিমধ্যেই অনেকে ভড়কে গেছেন। অনেকেই পালাবার চেষ্টা করছেন। অনেকেই তাদের রেটোরিকের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছেন। এখনই আমরা এই ভিসা নীতির প্রভাব লক্ষ্য করছি।