নির্বাচনের নেপথ্যে সুবাতাস

কেটে যাচ্ছে অনিশ্চয়তার কালোমেঘ, অর্থনীতির সূচকগুলোর নিম্নমুখিতার ধস ঠেকাতে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের বিকল্প নেই
‘দুর্জনের ছলের অভাব হয় না’-প্রবাদটি চলমান রাজনীতির জন্য জুতসই উদাহরণ। দুষ্টু প্রকৃতির লোকদের ‘নির্বাচন বানচালের’ বাহানার শেষ নেই। গত আগস্ট মাসে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবেÑ এমন ঘোষণার পর নির্বাচন পেছানোর চতুর্মুখী ছলনা শুরু হয়। নির্বাচনের পরিবেশ নেই, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত নয়, আগে সংস্কার পরে নির্বাচন, অন্তর্বর্তী সরকারকে জনগণ আরো বেশি দিন ক্ষমতায় দেখতে চায় ইত্যাদি নানা ধরনের প্রচারণা চালানো হয়। ‘নির্বাচনের ট্রেন লাইনে উঠে গেছে’ প্রধান উপদেষ্টার এমন বক্তব্যের পর জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেয়া, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট, জাপাকে নিষিদ্ধ করার দাবিসহ নানান বাহানা তোলা হয়।
এমনকি ‘গণভোট ও জুলাই সনদ’ বিতর্কে আইন উপদেষ্টার ‘সাত দিনের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত সরকারকে জানানো’র অনুরোধকে ‘আইন উপদেষ্টার ঔদ্ধত্যপূর্ণ আল্টিমেটাম’ হিসেবে অভিহিত করে সোশ্যাল মিডিয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোকে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়। গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয়Ñ নির্বাচনের আকাশে কালোমেঘ জমাট বেঁধেছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে যেকোনো অঘটন ঘটে যেতে পারে। রাজনৈতিক দলগুলো প্রার্থী ঘোষণা করলেও ‘নির্বাচন বহুদূর’। দুর্জনদের এসব অপপ্রচার হালে পানি পাচ্ছে না। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুত নিচ্ছে এবং ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণার বার্তা দিয়েছে। সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনী, আনসার বাহিনী এবং নির্বাচনে ভোট গ্রহণের দায়িত্ব পালন করবে যে, সেই রিটার্নিং অফিসার, প্রিসাইডিং অফিসার নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করবেন এমন সবাইকে ভোট গ্রহণের দায়িত্ব পালনের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ড. ইউনূস বুঝে গেছেন নির্বাচিত সরকার ছাড়া ভেঙেপড়া অর্থনীতির মেরুদ- সোজা করা সম্ভব নয়। নানান চেষ্টা ও বহুমুখী উদ্যোগ নিয়েও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের দেশে আনা যায়নি এবং প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ছাড়া অথর্নীতিকে চাঙ্গা করার কোনো উদ্যোগ সফল হয়নি।
ফলে উপদেষ্টা পরিষদের অনেকেই আরো বেশি দিন ক্ষমতায় থাকার কূটকৌশল করলেও ড. মুহাম্মদ ইউনূস আর কোনোভাবেই বেশি দিন ক্ষমতায় থাকতে চাচ্ছেন না। নির্বাচন ঠেকানোর যতই বাহানা হোক, ড. ইউনূস ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের ব্যাপারে দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. নুরুল আমিন ব্যাপারী বলেন, ড. ইউনূস আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছার বাইরে কোনো কিছু করবেন না। মার্কিনিরা চায় জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার। ফলে যত বাধা-বিপত্তি আসুক, ড. ইউনূস ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন করে মার্চেই বিদেশ চলে যাবেন। গণভোট, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তিÑ ইত্যাদি দাবি করে যতই নির্বাচনের পরিবেশে ঘোলা করার চেষ্টা হোক, ড. ইউনূস ঘোষিত সময়েই ভোট দেবেন। কারণ তিনি এতদিনে বুঝে গেছেন, দেশের অর্থনীতি খুবই খারাপ। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন করেও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আনা যায়নি। নির্বাচিত সরকার ছাড়া বিদেশিরা বিনিয়োগ করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব ইউনূস এসব জানেন এবং বোঝেন বলেই তিনি একবার ক্ষমতা ছাড়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিলেন। আর এবারের নির্বাচন থেকে যারা দূরে থাকবে তারা রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়বে। জামায়াত এত বড় ভুল করবে না।
দেশের অর্থনীতির পারদ ক্রমান্বয়ে নি¤œমুখী হচ্ছে। ব্যবসা-ব্যাংকিং সব কিছু চলছে জোড়াতালি দিয়ে। ব্যবসায়ী সম্প্রদায় প্রতিদিনই সভা-সেমিনার-সিম্পোজিয়াম করে অর্থনীতির দুরবস্থার চিত্র তুলে ধরছেন। তারা বলছেন, নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার ক্ষমতায় না আসা পর্যন্ত বিদেশিরা বিনিয়োগ করবে না। এ অবস্থায় নির্বাচন পেছানো হলে অর্থনীতিতে আরো বিপর্যয় নেমে আসবে। অর্থনীতি হচ্ছে রাজনীতির প্রাণ। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার চাবিকাঠি। দেশের অর্থনীতিকে সবল করার চেষ্টায় সরকারের আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। প্রধান উপদেষ্টা জগৎজুড়ে নন্দিত একজন অর্থনীতিবিদ। অর্থমন্ত্রীর পরিচয়ও স্বনামখ্যাত অর্থনীতিবিদ হিসেবে। তারপরও যে অর্থনীতিতে গতি সৃষ্টি হয়নি, অর্থনীতির প্রায় সব খাতেই বিরাজ করছে স্থবিরতা। এসব চিত্র প্রধান উপদেষ্টার নজর এড়াচ্ছে না। ফলে আস্থাহীনতায় ভুগছেন ব্যবসায়ীরা। নানাচেষ্টা করেও মূল্যস্ফীতি কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। বিদেশে রফতানি কমে গেছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্য বলছে, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের অক্টোবরে দেশ থেকে ৩৮২ কোটি ৩৯ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। যেখানে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই মাসে ৪১৩ কোটি আট লাখ ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছিল। হুহু করে বাড়ছে বেকার সংখ্যা। বিদ্যুৎ-গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়ায় উৎপাদন কমে গেছে শিল্প খাতে। এ অবস্থার পরিবর্তন না হলে মিল-কারখানার চাকা এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে। দেশের অর্থনীতির এই বেহালদশা প্রধান উপদেষ্টার কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। তাই তিনি যতই বাধা-ষড়যন্ত্র হোক, ঘোষিত সময়ে নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর।
ঘোষিত সময়ে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন ঠেকানোর নানাভাবে চেষ্টা হতে পারে দেশি-বিদেশি এমন চক্রান্তের আগাম তথ্য পেয়েছিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সে জন্যই তিনি গত ৩০ অক্টোবর নির্বাচন সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে বড় কোনো শক্তি নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করতে পারেÑ এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন বানচালের জন্য দেশের ভেতর থেকে এবং বাইরে থেকে অনেক শক্তি কাজ করবে। ছোটখাটো নয়, বড় শক্তি নিয়ে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করা হবে। হঠাৎ করে আক্রমণ আসতে পারে। এই নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে। তবে যত ঝড়-ঝাপটা আসুক, আমাদের সেটি অতিক্রম করতে হবে।’ ওই বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা মাঠ প্রশাসন কর্মকর্তাদের পদায়ন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণ ও সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া তথ্য মোকাবিলার দিকনির্দেশনা দেন। প্রধান উপদেষ্টার এমন সতর্কবার্তা এবং তিন বাহিনী প্রধানের সাক্ষাতের পর নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্রকারীরা যেন ‘মওকা’ পেয়ে যায়। নির্বাচনের আকাশে কালোমেঘ নিয়ে প্রচারণা শুরু করে। ‘নির্বাচন হবে না’ এবং ‘নির্বাচন পিছিয়ে যাবে’ এমন প্রচারণায় বট বাহিনীকে সোশ্যাল মিডিয়ায় নামানো হয়। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধের নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্তে অটল। গত ৩ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে আলোচনা হয়। অতঃপর গণভোট ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ইস্যুতে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনের লক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোকে শেষবারের মতো সুযোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর আইন উপদেষ্টা প্রফেসর ড. আসিফ নজরুল সংবাদ সম্মেলন করে রাজনৈতিক দলগুলোকে গণভোট, জুলাই সনদ ইস্যুতে এক সপ্তাহের মধ্যে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারকে জানানোর বার্তা দেন। সেখানে স্পষ্ট জানানো হয়, রাজনৈতিক দলগুলো এতে ব্যর্থ হলে সরকার নিজেদের মতো করেই ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেশবাসীকে জানিয়ে দেবে; তখন দলগুলোর আর করার কিছু থাকবে না। কিন্তু আসিফ নজরুলের এই বার্তাকে রাজনৈতিক দলগুলোকে এক সপ্তাহের ‘আল্টিমেটাম’ অবিহিত করে নেতিবাচক প্রচার করা হয়।
প্রতিদিনই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনে হাজির হয়ে নিজেদের দাবি-দাওয়া জানাচ্ছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, ঘোষিত সময়ের মধ্যেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি এগিয়ে চলছে। কয়েকটি রাজনৈতিক দল জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট দাবি করলেও নির্বাচন কমিশন সে দাবি পাত্তা দিচ্ছে না। প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানিয়েছেন, আগামী ১৮ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। তবে ২ নভেম্বর জানানো হয়, দেশে ভোটারের সংখ্যা ১২ কোটি ৭৬ লাখ। এর আগে গত ২০ অক্টোবর নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসার, কোস্টগার্ডসহ সংশ্লিষ্ট বাহিনীর সঙ্গে মতবিনিময়ের পর নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানান, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৯০ হাজার থেকে এক লাখ সেনাবাহিনী সদস্য মাঠে থাকবেন। প্রায় দেড় লাখ পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। আনসার-ভিডিপি থেকে আসবেন প্রায় পাঁচ থেকে ছয় লাখ সদস্য। ইতোমধ্যেই পুলিশ ও আনসার বাহিনী সদস্যদের ট্রেনিং দেয়া শুরু হয়েছে।
দেশি-বিদেশি কোনো চক্র নির্বাচন ঠেকাতে পারবে নাÑ এটি পরিষ্কার হওয়ায় বিএনপি গত ৩ নভেম্বর ২৩৭ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে। বিএনপির এই প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর সারাদেশে ভোটের আমেজ শুরু হয়ে গেছে। কয়েক মাস আগে জামায়াত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করলেও ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে পেছানোর চেষ্টায় ‘সবার আগে গণভোট’ তৎপরতা চালিয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট দাবি করে রাজপথে আন্দোলন করছে। আটটি দল জোট করে গণভোটের দাবিসহ পাঁচ দফা দাবিতে মাঠ গরম করার চেষ্টা চালাচ্ছে। দলটির নায়েবে আমির ডা. আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের কয়েক দিন আগে বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন যথাসময়ে হোক না হোক, নভেম্বর মাসে গণভোট দিতে হবে। জামায়াতের এই ‘গণভোট প্রেম’ নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করেন, নির্বাচন ঘোষিত সময়ে নাও হতে পারে। জামায়াত নির্বাচন ঠেকানোর চেষ্টা করতে পারে, এমনকি ভারতের নীলনকশা অনুযায়ী একপক্ষীয় নির্বাচনের দিকে দেশকে ঠেলে দিতে পারে। কিন্তু দলটির আমির ড. শফিকুর রহমান যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে ‘নতুন বার্তা’ দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রবাসীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলে তিনি বুঝে গেছেন, সবাই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ব্যাপারে একমত। পাঁচ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন করা জামায়াতের জন্য হিতে বিপরীত হতে পারে। গতকাল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে নেমেই তিনি জামায়াত নেতাকর্মী ও দেশবাসীর প্রতি বার্তা দিয়ে বলেছেন, ‘জামায়াত সবাইকে নিয়ে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন দেখতে চায়। আমাদের মধ্যে মতানৈক্য থাকবে, তবে দোয়া করেন, মতবিরোধ যেন না হয়। মতের ভিন্নতা থাকবে। এটিই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। সব দল তো এক দল নয়। সবগুলো দল ভিন্ন ভিন্ন। তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতেও মতপার্থক্য থাকবেÑ এটিই স্বাভাবিক। আমরা সবার মতকে শ্রদ্ধার সাথে দেখি। তবে আমরা নিজেরা যে মতটি প্রকাশ করি, আমরা চেষ্টা করি চিন্তাভাবনা করে জাতির স্বার্থেই সে মতগুলো প্রকাশ করা হয়। অতএব, মতানৈক্য, এটি ডেমোক্রেসির সৌন্দর্য। এর জন্য এখানে বিরোধ লেগে গেছে অথবা দেশ একেবারে অস্থির হয়ে গেছেÑ আমরা এইটুকু চিন্তা করতে রাজি নই। আমরা এক বছর আগেই প্রার্থীদের তালিকা আঞ্চলিকভাবে জানিয়ে দিয়েছি। চূড়ান্ত তালিকাটা সময়মতো আমরা ইনশাআল্লাহ কেন্দ্রের পক্ষ থেকে ঘোষণা করব। যেহেতু আমরা একা ইলেকশন করব না, আরো অনেককে আমরা ধারণ করব দেশ এবং জাতির স্বার্থে, সব দিক বিবেচনা করেই চূড়ান্তভাবে যথাসময়ে ইনশাআল্লাহ প্রার্থী ঘোষণা করব। দলটির আমিরের এমন বক্তব্যে পরিষ্কারÑ আন্দোলনের মাঠ ছেড়ে দ্রুতই দলটি নির্বাচনমুখী হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি নির্বাচনে প্রার্থী ঘোষণার পর এখন জামায়াতসহ সব রাজনৈতিক দল প্রার্থী ঘোষণা করবে। পাশাপাশি নির্বাচনী সমঝোতা, জোট ইতাদি করার চেষ্টা করবে। গণভোট বা জুলাই সনদের আইনি স্বীকৃতি দেয়ার দাবির কারণে কোনো দল নির্বাচন থেকে দূরে থাকলে রাজনীতির মাঠ থেকে ছিটকে পড়বে। এবারের নির্বাচনে কোনো দলের নির্বাচন থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী। জামায়াত যতই গণভোটের দাবি নিয়ে মাঠ ঘোলার চেষ্টা করুক এবং এনসিপি যতই জুলাই সনদের আইনি স্বীকৃতির দাবিতে অটল থাকুক না কেন, তারাও দ্রুতই নির্বাচনী ট্রেনে উঠে পড়বে। এনসিপি এতোমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছে, তারা নির্বাচনে প্রার্থী দেবে এবং বেগম খালেদা জিয়া যে তিন আসনে ভোট করবেন তাকে সম্মান জানাতে সে আসনগুলোতে এনসিপি প্রার্থী দেবে না। ফলে দেশি-বিদেশি যে শক্তিগুলো নির্বাচনের আকাশে কালোমেঘের প্রত্যাশায় প্রহর গুনছেÑ তাদের স্বপ্ন বুমেরাং হতে যাচ্ছে।






