বিশ্বের নতুন অস্ত্র সরবরাহকারীদের চিনে রাখুন
এদের কাছেই তুলনামূলক কম দামে পাবেন ড্রোন, যুদ্ধবিমান আর ট্যাংক…
উত্তর কোরিয়ার কাছে অস্ত্র ও গোলাবারুদের বিপুল মজুদ আছে বলে ধারণা করা হয়। গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাশিয়ার সুদূর পূর্বাঞ্চলে ট্রেন-যোগে আসেন দেশটির নেতা কিম জং উন। এক মহাকাশ যান উৎক্ষেপণ কেন্দ্রে পুতিনের সাথে তার করমর্দনের দৃশ্য গণমাধ্যমের সুবাদে দেখেছে বিশ্ববাসী। দুই নেতার এ সাক্ষাৎ – নিজস্ব বিচারেই ছিল স্মরণীয় ঘটনা। কিন্তু, এ সফরকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে অস্ত্র বাণিজ্য নিয়ে যেসব সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে- তা আরও নজিরবিহীনই বলা যায়।
বিশ্বের শীর্ষ পাঁচ অস্ত্র রপ্তানিকারক– যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স, চীন ও জার্মানি –মোট রপ্তানির দুই-তৃতীয়াংশ করে থাকে। কিন্তু, উদীয়মান রপ্তানিকারকরা এ বাণিজ্যের পুরোনো প্রতিষ্ঠিত শক্তিগুলোর বিপরীতে দৃঢ় প্রতিযোগী হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে।
পরিবর্তনশীল ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে তারা, এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন থেকেও সুবিধা পাচ্ছে।
গত জুলাইয়ে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্ফেই শোইগুর উ. কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ং সফরের পরে রাশিয়ায় আসেন কিম। রাশিয়ার যুদ্ধ প্রচেষ্টায় অস্ত্রসরঞ্জাম সরবরাহের সামর্থ্য উ. কোরিয়ার আছে কিনা– তা সরেজমিনে দেখতেই দেশটিতে যান শোইগু।
নিজেদের উৎপাদিত সমরাস্ত্রের ক্রেতা পেতে চায় পিয়ংইয়ং। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বের খুব কম সরকারই রাশিয়ার কাছে অস্ত্র বিক্রিতে আগ্রহী। রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র চীনও একারণে সরাসরি অস্ত্র বিক্রি করা থেকে বিরত আছে। বেইজিং দ্বৈত-কাজে (সামরিক/ বেসামরিক) ব্যবহার উপযোগী শুধু কম্পিউটার চিপস-ই দিয়েছে মস্কোকে। অন্যদিকে, ইরান কোনো দ্বিধা করেনি। তেহরান প্রায় ২,৪০০ কামিকাজি ড্রোন ক্রেমলিনকে সরবরাহ করেছে।
রাশিয়াকে ড্রোন-সহ বহু ধরনের অস্ত্র-সরঞ্জাম সরবরাহ করতে পারে উ. কোরিয়া। এরমধ্যে অন্যতম হতে পারে কেএন-২৩ মিসাইল, যা রাশিয়ার ইস্কাদার ব্যালেস্টিক মিসাইলের হুবুহু নকল। ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য স্বচালিত হাউইটজার, মাল্টিপল-লঞ্চ রকেট সিস্টেম-ও কিনতে পারে মস্কো।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সূত্র মারফত দ্য ইকোনমিস্ট জানায়, এরমধ্যেই রাশিয়াকে ১৫২ মিলিমিটার কামানের গোলা ও কাতিউশা রকেট সরবরাহ করছে। আর তা করেছে গত এক বছর ধরে।
পিয়ংইয়ং ও তেহরানের শাসকগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরেই নানাবিধ পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কবলে। ফলে নতুন করে হারানোর মতো কিছু নেই তাদের। বরং পুতিনের সরকারের সাথে ব্যবসা করে লাভবান হতে পারে। এজন্যই মস্কো যুদ্ধ-সরঞ্জাম ক্রয়ে তাদের দিকে ঝুঁকেছে।
ইউক্রেন যুদ্ধের সুবাদে শুধু উ. কোরিয়ার প্রতিরক্ষা শিল্পে সুবাতাস বইছে তাই-ই নয়, বরং তাদের বৈরী প্রতিবেশী দ. কোরিয়া আরও ভালো ব্যবসা করছে। অবশ্য যুদ্ধ শুরুর আগে থেকেই সিওলের অস্ত্র উৎপাদকদের রপ্তানি কার্যাদেশ পূরণে ব্যস্ততার শেষ ছিল না। ২০২২ সাল পর্যন্ত গত পাঁচ বছরে দ. কোরিয়া বিশ্বের নবম শীর্ষ অস্ত্র রপ্তানিকারকদের তালিকায় উঠে আসে বলে জানায় স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিপ্রি)। ২০২৭ সাল নাগাদ বিশ্বের চতুর্থ-বৃহৎ অস্ত্র রপ্তানিকারক হওয়ার লক্ষ্যও রয়েছে সিওলের।
২০২২ সালে দ. করিয়া ১৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যের অস্ত্র বিক্রি করেছে, যা আগের বছরের দ্বিগুণ। এরমধ্যে ১৪.৫ বিলিয়ন ডলার এসেছে পোল্যান্ড থেকে।
যুদ্ধংদেহী রাশিয়ার হুমকি মোকাবিলায় ইউরোপের দেশগুলো প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি জোরদার করেছে। আর এই প্রস্তুতির অগ্রভাগে রয়েছে পোল্যান্ড। দ. কোরিয়ার সাথে তারা এত সুবিশাল চুক্তি করেছে– যা বিস্ময়কর। এই চুক্তির আওতায় আছে – ১ হাজার কে-২ ব্ল্যাক প্যান্থার ট্যাংক, এরমধ্যে ১৮০টি ট্যাংক জরুরি ভিত্তিতে দ. কোরিয়ার নিজস্ব ভাণ্ডার থেকে পোল্যান্ডে পাঠানো হবে। বাকি ৮২০টি লাইসেন্সের আওতায় পোলান্ডেই উৎপাদন করা হবে। জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও ইতালির সেনাবাহিনীর কাছে যে পরিমাণ ট্যাংক আছে – এই সংখ্যা তার চেয়েও বেশি।
একই প্যাকেজের আওতায় আরও রয়েছে, ৬৭২টি কে৯ স্বচালিত হাউইটজার, ২৮৮টি কে২৩৯ চুনমু মাল্টিপল রকেট লঞ্চার এবং তুলনামূলক কম দামের ৪৮টি গোল্ডেন ঈগল এফএ-৫০ যুদ্ধবিমান।
লন্ডন-ভিত্তিক চিন্তক সংস্থা – ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের একজন বিশ্লেষক টম ওয়াল্ডিনের মতে, প্রতিযোগিতামূলক দামে উচ্চ মানের অস্ত্র দ্রুত সরবরাহ করতে পারার কারণে সফল হচ্ছে দ. কোরিয়ার অস্ত্র বাণিজ্য। তাদের উৎপাদন দক্ষতার প্রতিফলন দেখা যায় পণ্যের দামে। আমেরিকান অস্ত্র ব্যবহারের সুবাদে গুণগত মান সম্পর্কেও তারা অভিজ্ঞতা লাভ করেছে। এই শিল্পের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে তাদের বেসামরিক হাই-টেক খাত। তাছাড়া, বৈরী প্রতিবেশী থাকায় দক্ষিণ কোরিয়া দ্রুত অস্ত্র উৎপাদনেও জোর দেয়। সমরাস্ত্র কারখানার উৎপাদন সারি– নিজ দেশের চাহিদা মেটাতে সচল থাকছে, ফলে বিদেশি ক্রেতাদের অর্ডারও দ্রুত সেখান থেকে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে।
সিপ্রি’র আর্মস-ট্রান্সফার প্রোগ্রামের একজন গবেষক সিমন ওয়েজম্যান বলেন, সরকারের সর্বাত্মক সমর্থন এবং ঋণ পাওয়ার আকর্ষণীয় সুবিধা থাকা – দ. কোরিয়ার এই সাফল্যের পেছনে অপরিহার্য ভূমিকা রেখেছে।
এশিয়ার অনেক দেশ আমেরিকাকে নির্ভরযোগ্য মিত্র মনে করে না। অন্যদিকে, দক্ষিণ কোরিয়া আমেরিকার ঘনিষ্ঠ মিত্র হলেও সমরাস্ত্র বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ওয়াশিংটনের মতো কঠোর অবস্থান নেই তাদের। একারণেও এশিয়ার অনেক দেশ দ. কোরিয়ার অস্ত্র কিনেছে। ফলে আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা সহযোগিতা সিওলকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।
শুধু এশিয়ায় নয়, একারণে বৈশ্বিক অস্ত্র বাজারেও দ. কোরিয়ার সুনাম তৈরি হয়েছে। কানাডাও এজন্য দ. কোরিয়ার সাথে প্রতিরক্ষা সম্পর্কে আগ্রহী। অটোয়া তাদের পুরোনো সাবমেরিন বহরের আধুনিকায়ন করতে চায়। নির্ভরযোগ্যতার কারণে দ. কোরিয়া এই চুক্তি পেয়েও যেতে পারে।
তবে ভবিষ্যতে নিজস্ব প্রযুক্তি হস্তান্তরে দেশটি কতোটা উদার হবে – সেটাও এক বড় প্রশ্ন। কানাডা ও পোল্যান্ডের মতো দেশের কাছে এই প্রযুক্তি হস্তান্তর খুবই গুরুত্ব পাচ্ছে। পোল্যান্ড দ. কোরিয়ার অস্ত্র রপ্তানির অংশীদার হিসেবে ইউরোপের সমরাস্ত্র বাজারে –- ফ্রান্স ও জার্মানির মতো প্রতিষ্ঠিত সরবরাহকারীদের সাথে প্রতিযোগিতা করতে চায়।
উদীয়মান অস্ত্র রপ্তানিকারকদের মধ্যে দ. কোরিয়া যদি নেতা হয়, তাহলে দ্বিতীয় স্থানটি অবশ্যই তুরস্কের। ২০০২ সালে রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের একে পার্টি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই স্থানীয় প্রতিরক্ষা শিল্পকে বলিষ্ঠ ও স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ নেয়, এবং এখাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করতে থাকে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় তুরস্কের কাছে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র ও প্রযুক্তি উৎপাদনে– যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা – আঙ্কারাকে স্বনির্ভর হতে আরও উৎসাহী করেছে। এর আগে ২০১৯ সালে রাশিয়ার এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনায় ন্যাটো সদস্য তুরস্কের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান প্রস্তুতের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হওয়ার পরেও– তা আঙ্কারার কাছে বিক্রি করেনি ওয়াশিংটন। তাই আঙ্কারা এখন ছোট-বড় সব ধরনের যুদ্ধাস্ত্র দেশেই উৎপাদনের চেষ্টা করছে। কিছু কিছু খাতে দেশটি ব্যাপক সাফল্য লাভ করেছে।
তুরস্কের দুর্বারগতিতে উত্থান
সিপ্রির ধারণা, ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে তার আগের পাঁচ বছরের তুলনায় তুরস্কের অস্ত্র রপ্তানি বেড়েছে ৬৯ শতাংশ। একইসময়ে বৈশ্বিক অস্ত্র বাজারের অংশীদারিদারত্ব দ্বিগুণ হয়েছে।
গত জুলাইয়ে প্রকাশিত তুরস্কের স্থানীয় শিল্পের একটি কর্তৃপক্ষের মতে, ২০২২ সালে দেশটির প্রতিরক্ষা ও বিমান রপ্তানি ৩৮ শতাংশ বেড়ে ৪.৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। চলতি বছরের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ৬ বিলিয়ন ডলার। দ. এশিয়ার পাকিস্তান তাদের সাবমেরিনের আধুনিকায়ন করছে তুরস্কে। ইসলামাবাদের কাছে চারটি করভেট শ্রেণির যুদ্ধজাহাজ বিক্রি করেছে আঙ্কারা, এরমধ্যে গত মাসেই সবশেষ যুদ্ধজাহাজটির ডেলিভারি পায় পাকিস্তান। অন্যান্য দেশের সাথেও যুদ্ধজাহাজ বিক্রির চুক্তি হতে পারে তুরস্কের। কারণ, প্রতিযোগিতামূলক দামে এসব জাহাজ অফার করছে তুরস্ক; তাছাড়া ক্রেতা দেশ বাছবিচার নিয়েও আঙ্কারার পশ্চিমা দেশগুলোর মতো মাথাব্যথা নেই।
তুরস্কের প্রতিরক্ষা খাত নিয়ে আলোচনা, অথচ ড্রোনের উল্লেখ থাকবে না– এমনটা হওয়ার জো নেই। দেশটির প্রতিরক্ষা খাতকে নেতৃত্ব দিচ্ছে অস্ত্রসজ্জিত ড্রোন রপ্তানি। গত ১৮ জুলাই সৌদি আরবের সাথে ৩ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছে তুরস্ক। এর আওতায়, রিয়াদের কাছে আকিঞ্চি আনম্যান্ড কমব্যাট এরিয়েল ভিহেইকল বা ইউক্যাভ বিক্রি করবে।
এই ড্রোনের প্রস্তুতকারক হলো তুরস্কের বিখ্যাত ড্রোন নির্মাতা বায়কার ডিফেন্স। এই কোম্পানির সবচেয়ে বিখ্যাত পণ্য হলো: বায়রাক্তার টিবি-২। গত এক দশকে লিবিয়া, আজারবাইজান, ইথিওপিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে চমক দেখিয়েছে টিবি-২।
ড্রোন প্রযুক্তিতে তুরস্কের উত্থানের পেছনেও ভূমিকা যুক্তরাষ্ট্রের। কুর্দি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য আমেরিকার ড্রোন কিনতে চেয়েছিল তুরস্ক, কিন্তু ওয়াশিংটন তাতে রাজি না হওয়ায় – একলা চলো নীতিতেই এগোয় আঙ্কারা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের একান্ত চেষ্টার ফলে উন্নত টিবি-২ তৈরি করা সম্ভব হয়। যা কিনতে চায় ২০টির বেশি দেশ।
আমেরিকার ড্রোনের চেয়ে সহজলভ্য এবং দামে সস্তা হওয়ায় টিবি-২ এখন রপ্তানিবাজারে এক স্বনামধন্য পণ্য। চীনও কম দামে ড্রোন বিক্রি করে, কিন্তু এর তুলনায় তুর্কি টিবি-২ বেশি নির্ভরযোগ্য।
এর চেয়েও বেশি অত্যাধুনিক ও শক্তিশালী হলো আকিঞ্চি ড্রোন। মনুষ্যহীন এই আকাশযান আরও বেশি বড় বোমা, মিসাইল বহন করতে পারে। এমনকী আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে পারে আকিঞ্চি। এতে যুক্ত করা যায় স্টিলথ প্রযুক্তির সোম-এ ক্রুজ মিসাইল। রাডারকে ফাঁকি দিতে সক্ষম এ মিসাইলের রপ্তানি সংস্করণ ২৫০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।
এসব কারণে ধারণা করা হচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশও আকিঞ্চির ক্রেতা হবে। সম্ভাব্য এই ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে, কাতার, ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। সাম্প্রতিক সময়ে, আমেরিকার সাথে সৌদি ও আমিরাতের সম্পর্কে তিক্ততা বেড়েছে, এই অবস্থায় দেশ দুটি মার্কিন সমরাস্ত্রের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে চাইছে। উভয় দেশেরই নিজস্ব প্রতিরক্ষা শিল্প গড়ে তোলার উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে; এক্ষেত্রে তুরস্ককে তারা উৎসাহী অংশীদার এবং অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে মনে করে।
তুরস্ক তার নৌবাহিনীর জন্য ২৫ হাজার টনের একটি বিমানবাহী রণতরী নির্মাণ করেছে। এটি বিশ্বের প্রথম ড্রোন ক্যারিয়ার। এর প্রধান অস্ত্র হবে- বায়রাক্তারের তৈরি নতুন একটি ইউক্যাভ বা মনুষ্যহীন যুদ্ধবিমান। মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশ এধরনের রণতরী কিনতে আঙ্কারার সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
এদিকে পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান ‘কান’ ডেভেলপ করছে তুরস্ক। এই প্রকল্পের অংশীদার পাকিস্তান ও আজারবাইজান। প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাজ্যের বিএই সিস্টেমস এবং রোলস-রয়েস।
যুক্তরাষ্ট্রের থেকে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান না পেয়েই ‘কান’ তৈরি করছে তুরস্ক। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আমেরিকা যেসব দেশের কাছে এফ-৩৫ বিক্রি করবে না, তাদের কাছে এই বিমান অফার করবে তুরস্ক। এক্ষেত্রেও উপসাগরীয় দেশগুলো প্রথমদিকের ক্রেতা হতে পারে।
রপ্তানি বাজারে তাদের প্রধান প্রতিযোগী দেশগুলো সমস্যায় থাকার সুবিধা লাভ করেছে তুরস্ক ও দ. কোরিয়া। যেমন সিপ্রির মতে, ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আগের চার বছরের তুলনায় রাশিয়ার অস্ত্র রপ্তানি কমেছে ৩১ শতাংশ। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা শিল্পের ওপর অস্ত্র সরবরাহের বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। এতে রপ্তানি কার্যাদেশ পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। একইসঙ্গে, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার ফলেও অনেক দেশ রুশ সমরাস্ত্র কিনতে আগ্রহী হচ্ছে না। ভারত ও চীনের মতো প্রধান দুই গ্রাহকও রাশিয়ান অস্ত্রের ওপর তাদের নির্ভরশীলতা কমাচ্ছে।
একক দেশ হিসেবে রাশিয়ার সমরাস্ত্রের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ভারত। কিন্তু, যেমন ২০১৮-২২ মেয়াদে নয়াদিল্লির রুশ সমরাস্ত্র ক্রয় কমেছে ৩৭ শতাংশ। যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়ার অস্ত্র উৎপাদকরা আগে নিজ দেশের বাড়তি চাহিদা মেটানোকেই গুরুত্ব দিচ্ছে। এই অবস্থায়, সময় থাকেতেই আরও কেন কমানো যায়নি– হয়তো তা ভেবেই কপাল চাপড়াচ্ছেন নয়াদিল্লির কর্তারা। রাশিয়া থেকে কেনা সুখই-৩০ এমকেআই বিমানের বহর রয়েছে ভারতের, কিন্তু যন্ত্রাংশের অভাবে অত্যাধুনিক এই যুদ্ধবিমানগুলো সচল রাখা নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাছাড়া, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার কিছু অস্ত্রের কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে মাইক্রোচিপ, বল-বিয়ারিং, মেশিন টুলস ও অপটিক্যাল সিস্টেমের মতো সরঞ্জাম কিনতে পারছে না রাশিয়া। এতে দেশটির যুদ্ধবিমান, অ্যাটাক হেলিকপ্টার-সহ অন্যান্য মারাত্মক অস্ত্র বিক্রি আরও সমস্যার মধ্যে পড়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ যত দীর্ঘস্থায়ী হবে অস্ত্র বাজারে নিজ অবস্থান আঁকড়ে ধরে রাখতে ততোই হিমশিম খাবে রাশিয়া।