মূল্যস্ফীতি বিরাট সমস্যা এটা কমাতে হবে : প্রধানমন্ত্রী
দেশে মূল্যস্ফীতিকে বিরাট সমস্যা হিসেবে অবিহিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রত্যেকটি দেশের জন্য যুদ্ধের ফলাফল খারাপ। কারণ, মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যায়। অনেক কিছুই আমরা উৎপাদন করি, কিন্তু যেসব পণ্য আমাদের দেশে উৎপাদন কম হয় বা আমদানি করতে হয় সেসব পণ্যের মূল্য এবং পরিবহণ ব্যয় অত্যাধিক বেড়ে গেছে। তারপর ঋণের সুদ বেড়ে যাওয়া এর একটা বিরাট চাপ আমাদের অর্থনীতির ওপর পড়েছে।
গতকাল বুধবার বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে পরিকল্পনা কমিশনের সভায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধি অর্জন আমাদের ধরে রাখতে হবে। এখানে মূল্যস্ফীতি একটি বিরাট সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। মূল্যস্ফীতি যদি প্রবৃদ্ধির থেকে কম থাকে তাহলে তার শুভফল মানুষের কাছে পৌঁছায়। মূল্যস্ফীতির কিছুটা আমরা লাগাম টেনে ধরেছি, আমাদের সামনে আরও কমাতে হবে। কৃষি, গ্যাস, বিদ্যুৎ-প্রভৃতিতে ভর্তুকি দেয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এই ভর্তুকি ও আমাদের ধীরে ধীরে কমিয়ে আনতে হবে। কারণ, এক্ষেত্রে ভর্তুকি অনেকাংশে বাড়িয়ে ফেলায় মূল্যস্ফীতিও বেড়ে গেছে। এখন আমাদের যেটা করতে হবে একটি সুনির্দিষ্ট সময়ে কত শতাংশ বাড়ালে আমাদের মূল্যস্ফীতিতে চাপ পড়বে না, সেটা মাথায় রেখে আমাদের ধীরে ধীরে বাড়াতে হবে। আমরা চট করে বেশি বাড়াতে পারব না, সেটা মাথায় রেখে আমাদের চলতে হবে।
‘পাঁচ বছর টাইম ইজ টু শর্ট’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজেই পাঁচ বছর আমি কাজ করে যাব দেশের জন্য। আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার ঘোষণা দিয়েছি। সেটা মাথায় রেখেই আমাদের কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করতে হবে। সরকার গঠন করার পরে দ্রুত আমরা বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছি। কারণ, নষ্ট করার মতো সময় আমাদের হাতে নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জাতির কাছে ঋণী এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। কারণ, বারবার তারা ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করেছে। আমি আজকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুনরায় দায়িত্ব পেয়েছি। স্বাধীনতার সুফল এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যেন আমরা ঘরে ঘরে পৌঁছাতে পারি, স্বাধীনতার শুভফল যেন জনগণ পায় সেজন্যই আমাদের পথচলা।
চলমান উন্নয়ন প্রকল্প যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমাপ্ত এবং যথাযথ যাচাই-বাছাই করে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সেই চলমান প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করতে হবে যেগুলোর খরচ কম। কারণ আমি মনে করি, আমরা যত তাড়াতাড়ি সেগুলো সম্পন্ন করব আরও বেশি সুবিধা পাব।
প্রকল্পগুলো শেষ করতে দেরি না করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিশ্চিত করুন যে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে কোনো বিলম্ব হবে না এবং বারবার প্রকল্পগুলো সম্পূর্ণ করার জন্য কোনো অপ্রয়োজনীয় সময় বাড়ানো হবে না। এসময় অপ্রয়োজনীয় বড় কোনো উন্নয়ন প্রকল্প না নেওয়ার জন্য পুনরায় আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি নির্দিষ্ট এলাকার জন্য প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা মূল্যায়ন, এর সুবিধার জন্য মানুষের অ্যাক্সেস এবং অর্থনীতিতে এর অবদানের মতো কিছু বিষয় যাচাই করে প্রকল্প গ্রহণের পরামর্শ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বড় প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে অন্যান্য যে বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে তা হলো- প্রকল্পটি সম্পূর্ণ করতে কত টাকা লাগবে, কত টাকা ঋণ হবে, কত টাকা পরিশোধ করতে হবে, ঋণ পরিশোধ করতে বাংলাদেশ কত সময় পাবে এবং শেষ পর্যন্ত, বাংলাদেশ কি ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম? যেকোনো মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের এই বিষয়গুলো সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে।