যেভাবে মিশরের অর্থনীতিকে চাপে ফেলেছে গাজা যুদ্ধ
গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নির্বিচারে আগ্রাসন চালাচ্ছে ইহুদিবাদী ইসরায়েল। দীর্ঘ সাড়ে চার মাসেরও বেশি ধরে চলা এই নৃশংস আগ্রাসনে ২৯ হাজার ৬০৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এর অধিকাংশই নারী ও শিশু। আহত হয়েছে ৬৯ হাজার ৭৩৭ ফিলিস্তিনি।
গাজার এই যুদ্ধ অবরুদ্ধ ওই ভূখণ্ড থেকে ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। লেবানন, সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেন ও ইরানেও গিয়ে পড়েছে এই যুদ্ধের উত্তেজনা। লোহিত সাগরে জাহাজ চলাচলেও পড়েছে এর প্রভাব। এরই ধারাবাহিকতায় ব্যাপক প্রভাব পড়েছে ‘লাইফ সাপোর্টে’ থাকা মিশরের অর্থনীতিতে। বিশ্লেষকদের মতে, গাজার বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধ এবং লোহিত সাগরে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার কারণে আগে থেকেই মিশরের ভঙ্গুর অর্থনীতি আরও গভীর সংকটের মুখোমুখি হতে চলেছে।
মিশরের ক্ষয়িষ্ণু অর্থনীতি বর্তমানে ক্রমবর্ধমান ঋণে জর্জরিত। দেশটির সরকারের ঋণ এখন মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৯০ শতাংশেরও বেশি। অন্যদিকে, দেশটির মুদ্রা মিশরীয় পাউন্ড দাম হারাচ্ছে, বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ফুরিয়ে যাচ্ছে, আর বাড়ছে মূল্যস্ফীতি।
এসব চ্যালেঞ্জ চলমান যুদ্ধের কারণে আরও জটিল হয়ে উঠছে। কারণ মিশরের সঙ্গে গাজা ও ইসরায়েল উভয়ের সীমান্ত রয়েছে। ইসরায়েলের অবিরাম আক্রমণের ফলে গাজার জনসংখ্যার একটি বড় অংশ রাফায় আশ্রয় নিয়েছে।
অন্যদিকে, পর্যটন ও সুয়েজ খাল মিশরের বৈদেশিক মুদ্রার দুটি প্রধান উৎস। যুদ্ধের প্রভাবে এই দুই খাত থেকেও আয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে।
যুগ যুগ ধরে সারাবিশ্বের দর্শনার্থীরা মিশরের পিরামিড, জাদুঘর, রিসোর্ট ও স্মৃতিস্তম্ভগুলো দেখতে দেশটিতে ভ্রমণ করেন। তাই দীর্ঘদিন ধরেই পর্যটন দেশটির জাতীয় আয়ের একটি প্রধান উৎস।
২০২২ সালে প্রায় ৩০ লাখ মিশরীয় পর্যটন শিল্পে নিয়োজিত ছিলেন।
গাজার বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে থেকেই মিশরের পর্যটন খাত টিকে থাকার লড়াই করছিল।
কোভিড-১৯ মহামারী দেশটির পর্যটন খাতে ধস নামিয়েছিল। একটু একটু করে পুনরুদ্ধারের দিকে এগোচ্ছিল মিশর। ধারণা করা হচ্ছিল- এযাত্রায় দেশটি ফের ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।
কিন্তু গাজা যুদ্ধ এবং লোহিত সাগর সংকট এই শিল্প থেকে রাজস্ব আসার সম্ভাবনাকে ব্যাহত করেছে।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল রেটিংস অনুসারে, মিশরের পর্যটন রাজস্ব গত বছরের তুলনায় ১০-৩০ শতাংশ হ্রাস পাবে। ফলে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ৪-১১ শতাংশ কমে যাবে এবং জিডিপি সংকুচিত হয়ে পড়বে।
জর্জ ম্যাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রভাষক আমর সালাহ মোহাম্মদ বলেছেন, “সিনাই উপদ্বীপের নিকটবর্তী হওয়ার কারণে পর্যটনে ধস নেমেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরেও এই খাত থেকে ১৩.৬৩ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব এসেছে।”
তিনি আরও বলেন, “চলমান সংঘাতের কারণে মিশরীয় পর্যটন খাতের ক্ষতির সম্পূর্ণ পরিমাণ এখন পর্যন্ত পরিমাপ করা কঠিন। তবে নভেম্বরের প্রথম দিকে বুকিং ২৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এতে বোঝা যায়, যুদ্ধ চলতে থাকলে মিশরের মন্দা বাড়ার গুরুতর আশঙ্কা রয়েছে।”
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় নভেম্বর মাস থেকে লোহিত সাগরে ইসরায়েল-ও তার মিত্রদের বাণিজ্যিক জাহাজে হুথিদের করা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলায় মিশর অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
সুয়েজ খালের মধ্য দিয়ে এশিয়ার সঙ্গে ইউরোপের সংযোগকারী এই সংক্ষিপ্ততম বাণিজ্য রুটে অচলাবস্থার ফলে, অনেক শিপিং কোম্পানি তাদের জাহাজ ঘুরিয়ে কেপ অব গুড হোপের পাশ দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরে সুয়েজ খাল থেকে মিশর ৯৪০ কোটি ডলার রাজস্ব আয় করেছে।
চলতি বছরের প্রথম ১১ দিনে সুয়েজ খাল থেকে আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪০ শতাংশ কমেছে। এরপর থেকে সেই ক্ষতি আরও বেড়েছে।
মিশরীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের তুলনায় এই বছরের শুরু থেকে জানুয়ারিতে সুয়েজ খাল থেকে রাজস্ব ৫০ শতাংশ কমেছে।
গতবছরের ৭ অক্টোবরের পর থেকে মিশরের গ্যাস অর্থনীতিও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের হামলার দু’দিন পরই ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা সংস্থা তামার গ্যাসক্ষেত্র থেকে উত্তোলন সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। এটি ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় উপকূলীয় শহর আশদোদ থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
মিশরে দুটি গ্যাস তরলীকরণ কারখানা রয়েছে। ইসরায়েল তামার থেকে মিশরে গ্যাস রফতানি করে, সেখানে এটি এলএনজিতে রূপান্তরিত হয়। এরপর সেই গ্যাস ইউরোপ ও অন্যান্য বাজারে রফতানি করা হয়।
যুদ্ধের কারণে ২০২২ সালের একই সময়ের তুলনায় ২০২৩ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে মিশরের গ্যাসের পুনঃরফতানি ৫০ শতাংশের বেশি কমেছে।
এই সরবরাহ ব্যবস্থা ইসরায়েলের উপর মিশরের অর্থনৈতিক নির্ভরতার কারণ প্রকাশ করে।
রাফায় আশ্রয় নেওয়া ১৪ লাখ ফিলিস্তিনির ভাগ্যও মিশরে অস্বস্তির কারণ।
প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সরকার গাজাজুড়ে ইসরায়েলের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে বাঁচতে সিনাই উপদ্বীপে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আগমন ঠেকাতে চায়। কারণ মিশরে ইতোমধ্যেই ৯০ লাখ শরণার্থী রয়েছে।
১৯৪৮ সালে যুদ্ধ বন্ধের পর ইসরায়েল ফিলিস্তিনের শরণার্থীদের নিজেদের ঘরে ফিরতে দেয়নি। এরপর থেকেই ইসরায়েল শরণার্থীদের প্রত্যাবর্তনের জন্য ফিলিস্তিনিদের দাবি ক্রমাগত প্রত্যাখ্যান করে আসছে।
তাদের যুক্তি, শরণার্থীরা ফিরে আসলে ইহুদিরা হুমকির মুখে পড়বে।
ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে মিশর এবারের চলমান যুদ্ধে শরণার্থী গ্রহণের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে।
তাদের শঙ্কা, আগের মতোই এবারও নতুন শরণার্থী গ্রহণ করলে তারা আর নিজেদের দেশে ফিরে যেতে পারবে না।
এছাড়াও চলমান যুদ্ধ ঠিক কবে নাগাদ শেষ হবে সেটাও আঁচ করা যাচ্ছে না।
তবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনিরা যাতে উত্তর গাজা থেকে সরে যাওয়ার আদেশ মেনে নেয়। একইসাথে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে দেওয়া হবে বলেও আশ্বস্ত করা হয়েছে। তবে তেল আবিবের এমন আশ্বাসেও মিশর শরণার্থী গ্রহণে রাজি হয়নি।
আল-সিসি মনে করেন, ইসরায়েল পরবর্তীতে যুক্তি দিতে পারে যে, তারা ঠিকভাবে হামাসকে দমন করতে পারেনি। তখন এই যুদ্ধ বছরের পর বছর স্থায়ী হতে পারে এবং শরণার্থীদের দেশে ফেরা অনিশ্চিত হয়ে যেতে পারে।
কায়রো স্পষ্ট জানিয়েছে, তারা এমন কোনও পদক্ষেপকে সমর্থন করবে না, যা গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের স্থায়ীভাবে বাস্তুচ্যুত করতে পারে।
যদিও অনেক বিশেষজ্ঞ আশঙ্কা করছেন, এটি ইসরায়েলের একটি গেম প্ল্যান।
একইসাথে মিশর আশঙ্কা করছে, গাজার শরণার্থীদের আশ্রয় দিলে হামাস বা অন্যান্য ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীর সদস্যরাও দেশটিতে চলে আসতে পারে। এতে করে সিনাই অস্থিতিশীল হতে পারে, যেখানে মিশরের সামরিক বাহিনী বছরের পর বছর ধরে ইসলামিক জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে।
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো বিশ্লেষণে বোঝা যায, মিশর কেন গাজা থেকে সিনাইয়ে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতিকে একটি রেড লাইন অতিক্রম হিসেবে মনে করে।
গত মাসে মার্কিন অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন ওয়াশিংটনে মিশরের অর্থমন্ত্রী মোহাম্মদ মাইতের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মিশরের অর্থনীতি ও সংস্কারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের অঙ্গীকার করেন।
একই সঙ্গে গাজা যুদ্ধ ও লোহিত সাগরের নিরাপত্তা সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে মিশরের ৩০০ কোটি ডলারের ঋণ বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
অর্থনৈতিক সংস্কার প্যাকেজের মূল বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে- মিশরীয় সরকার কয়েক ডজন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উদ্যোগে শেয়ার বিক্রি করা, ভর্তুকি হ্রাস, একটি নমনীয় বিনিময় হারের দিকে অগ্রসর হওয়া এবং জাতীয় অর্থনীতিতে সামরিক বাহিনীর ভূমিকা আরও স্বচ্ছ করা।
তারপরও বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, দুই বছর আগে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ফলে সৃষ্ট ভূ-রাজনৈতিক ধাক্কার পর, গাজা যুদ্ধ এবং লোহিত সাগরের নিরাপত্তা সংকট সম্ভবত মিশরীয় নীতি-নির্ধারকদের অর্থনৈতিক সংস্কারের অনীহা আরও বাড়াবে।
এক সাক্ষাৎকারে রিস্ক ইন্টেলিজেন্স কোম্পানি আরএএনই’র মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা বিশ্লেষক রায়ান বোহল বলেন, “মিশরের নীতিনির্ধারকেরা তাদের (আইএমএফ) শর্ত পূরণের ক্ষেত্রে যে বহুমুখী চাপের সম্মুখীন হচ্ছেন, আইএমএফকে তা বিবেচনায় নিতে হবে।”
I’ve been surfing online more than 2 hours today, yet I never found any interesting article like
yours. It’s pretty worth enough for me. In my opinion, if all webmasters and bloggers made good content as
you did, the internet will be a lot more useful than ever before.
Here is my web site … vpn code 2024
I am really loving the theme/design of your website.
Do you ever run into any web browser compatibility issues?
A handful of my blog visitors have complained about my website not operating correctly in Explorer but looks great in Opera.
Do you have any solutions to help fix this problem?
Here is my site … vpn special coupon code 2024 (vpnspecialcouponcode.wordpress.com)
I used to be able to find good advice from your blog posts.
my blog post … vpn meaning
I don’t even know how I ended up here, but I thought this post was good.
I do not know who you are but definitely you’re going to a
famous blogger if you aren’t already 😉 Cheers!
Also visit my blog post – vpn special coupon code
Hello, i think that i saw you visited my web site thus i came to “return the favor”.I am trying
to find things to enhance my site!I suppose its ok to use some of your ideas!!
My website :: vpn coupon code ucecf
Very good article! We are linking facebook vs eharmony to find love online this particularly
great content on our site. Keep up the great writing.
Thank you for the auspicious writeup. It in fact was a entertainment account it.
Look complicated to far delivered agreeable from you!
However, how could we keep up a correspondence?
Also visit my web-site; eharmony special coupon code 2024
Somebody necessarily help to make severely articles I’d state.
That is the very first time I frequented your website page and to this point?
I amazed with the analysis you made to make this particular publish amazing.
Excellent job!
Feel free to surf to my webpage … nordvpn special coupon code 2024