সত্যিই কি মহাকাশে পরমাণু অস্ত্রে স্যাটেলাইট ধ্বংসের ক্ষমতা আয়ত্ত করছে রাশিয়া
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র অনুযায়ী রাশিয়া নাকি মহাকাশে পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগ করে স্যাটেলাইট ধ্বংসের ক্ষমতা আয়ত্ত করার চেষ্টা করছে। মার্কিন কংগ্রেসে বিষয়টি নিয়ে আলোড়ন চলছে।
ইউক্রেনের জন্য মার্কিন সামরিক সহায়তার প্রস্তাব নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসে যখন রাজনৈতিক টানপড়েন চলছে, ঠিক তখনই সংসদ সদস্যরা মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার এক রিপোর্ট হাতে পেয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন বিষয়টি আপাতত গোপন রাখার চেষ্টা করলেও কয়েকজন সংসদ সদস্য প্রকাশ্যে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে সংসদের নিম্ন কক্ষে রিপাবলিকান দলের নেতা মাইক টার্নার ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হুমকি’ নিয়ে অস্পষ্ট বিবৃতি প্রকাশ করায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। সংবাদ মাধ্যমেও সেই গোপন রিপোর্টের কিছু খণ্ডচিত্র প্রকাশিত হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, মার্কিন প্রশাসন রাশিয়ার নতুন এক সামরিক ক্ষমতা সম্পর্কে উদ্বিগ্ন। মহাকাশে কাজে লাগানো যায়, এমন এক পরমাণু অস্ত্র সৃষ্টি করে রাশিয়া যে কোনো স্যাটেলাইট অকেজো করে দেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে বলে মার্কিন গোয়েন্দা সূত্র দাবি করছে। বাইডেন প্রশাসন তাই কংগ্রেসের সদস্য ও ইউরোপে সহযোগী দেশগুলিকে বিষয়টি জানিয়েছে। নিউ ইয়র্ক টাইমস সংবাদপত্র মার্কিন প্রশাসনের এক বর্তমান ও এক প্রাক্তন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে রাশিয়ার মহাকাশ-ভিত্তির পরমাণু অস্ত্র তৈরির প্রচেষ্টার কথা জানিয়েছে।
সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খণ্ডচিত্র অনুযায়ী রাশিয়া এখনো সেই ক্ষমতা আয়ত্ত করেনি। তবে সেই লক্ষ্যে কাজ চলছে। ফলে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা অবিলম্বে কোনো হুমকির কারণ দেখছে না। রিপাব্লিকান দলের নেতা টার্নার সরাসরি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের উদ্দেশ্যে গোপনীয়তার বেড়াজাল সরিয়ে সেই হুমকির বিষয়ে কংগ্রেস, প্রশাসন ও সহযোগী দেশগুলির সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনার অনুরোধ জানিয়েছেন। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া সহজ হবে বলে তিনি মনে করেন। সম্প্রতি তিনি মার্কিন কংগ্রেসের এক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ইউক্রেন সফর করে সে দেশের কঠিন পরিস্থিতি সম্পর্কে দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেন।
আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে এমন উদ্বেগ বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে। বিশেষ করে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং সংসদে তার অনুগামীরা যখন আন্তর্জাতিক সামরিক সহযোগিতার পথ ত্যাগ করে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির পক্ষে সওয়াল করছেন, ঠিক তখনই রাশিয়ার নতুন সামরিক ক্ষমতা নিয়ে জল্পনাকল্পনা বিষয়টিকে আরো জটিল করে তুলছে। ট্রাম্প শিবিরের ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ সামরিক নীতি নিয়ে খোদ রিপাবলিকান দলেও বিতর্ক আরো জোরালো হবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। ট্রাম্প যেভাবে আবার ক্ষমতায় এলে সামরিক জোট ন্যাটোর ভূমিকা খর্ব করার কথা বলছেন, সেই মনোভাব আমেরিকার জাতীয় স্বার্থের জন্য কতটা ক্ষতিকর হতে পারে, সে বিষয়ে আগেই তর্কবিতর্ক শুরু হয়ে গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সাম্প্রতিক রিপোর্ট সেই প্রশ্নে ট্রাম্প শিবিরকে কতটা কোণঠাসা করতে পারে, মার্কিন রাজনীতি জগতে সে বিষয়ে জল্পনাকল্পনা চলছে।