Hot

সরকারের অবস্থানে অসন্তুষ্ট বিএনপি

নির্বাচন ইস্যুতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে হতাশা প্রকাশ করেছে বিএনপি। শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার এবং সংস্কার কার্যক্রম দৃশ্যমান করে সংসদ নির্বাচন দিতে চায় সরকার। সরকারের তরফে বলা হয়েছে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা করা হবে। বৈঠকে বিএনপি জানিয়েছে, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন সম্ভব। এরপরে নির্বাচন হলে জটিলতা বাড়বে। গতকাল দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকটি হয়। প্রায় দুই ঘণ্টার এই বৈঠকে বিএনপি’র তরফে সাত সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেন। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু প্রতিনিধিদলে ছিলেন। পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রধান উপদেষ্টা সুনির্দিষ্ট করে নির্বাচনের ডেটলাইন দেননি। তিনি বলেছেন যে, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন শেষ করতে চান। আমরা তার বক্তব্যে একেবারেই সন্তুষ্ট নই। আমরা পরিষ্কার করেই বলেছি যে, ডিসেম্বরের মধ্যেই যদি নির্বাচন না হয় তাহলে দেশে যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং সামাজিক পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে এবং সেটা তখন নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কঠিন হবে।

বৈঠক সূত্র জানায়, বিএনপি’র পক্ষ থেকে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি এবং করণীয় নিয়ে একটি লিখিত প্রস্তাবনা প্রধান উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরা হয়। সেখানে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে দলটি। নির্বাচন নিয়ে বিএনপি’র ওই প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে সরকারের তরফ থেকে বলা হয়-ফ্যাসিবাদ দোসরদের বিচার ও রাষ্ট্রীয় সংস্কারের কার্যক্রম দৃশ্যমান না করা পর্যন্ত নির্বাচন আয়োজন কঠিন। শিগগিরই এসব কার্যক্রমকে দৃশ্যমান করার উদ্যোগ ত্বরান্বিত করা হবে বলেও আশ্বস্ত করা হয় বিএনপি নেতাদের। জবাবে বিএনপি নেতারা সংস্কার নিয়ে বলেন, যে সমস্ত সংস্কার নিয়ে ঐকমত্য হবে তার মধ্যে যে সকল সংস্কার নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন ততগুলো দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে এবং বাকিগুলো সনদ হিসেবে থাকবে। সেই সনদ বাস্তবায়নের জন্য যারাই ক্ষমতায় আসবে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে। কিন্তু সংস্কার ও বিচারের দোহাই দিয়ে নির্বাচনকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলতে পারবেন না। একটি নির্বাচনের জন্য ১৮ মাস যথেষ্ট সময়। সেখানে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে বিচারের যে গতি, সংস্কারের যে গতি তাতে নির্বাচন নিয়ে জনমনে যথেষ্ট সন্দেহ সৃষ্টি হচ্ছে।

সূত্র আরও জানায়, বৈঠকে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন- ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়ান না কেন? সেখানে যদি কোনো সমস্যা থাকে তাহলে বলেন, আমরা প্রয়োজনে সাহায্য করবো। বর্তমান ট্রাইব্যুনালেরও তো লোকবল নাই। প্রসিকিউশন টিম পর্যাপ্ত নাই। তদন্ত টিম যথেষ্ট নাই। সেখানে বিচারের নামে সময়ক্ষেপণ আর বাহানা করে নির্বাচন পেছানোর কোনো মানে হয় না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে- বিএনপিকে একটি প্রতিপক্ষ মনে করা হচ্ছে। সরকারের কার্যক্রমে মনে হচ্ছে- তারা একটি মহলকে বিএনপি’র প্রতিপক্ষ দাঁড় করানো হচ্ছে। যাতে করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে- হয়তো বিএনপি’র সঙ্গে সরকারের একটি দূরত্ব রয়েছে। এটা রাজনীতির জন্য কখনো শুভকর ফল আনবে না বলে ওই নেতা জানান।

ডিসেম্বরে নির্বাচন না হলে কি করবে বিএনপি এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা আবারো আপনাদের সামনে আসবো দলের মধ্যে আলোচনা করে এবং আমাদের অন্যান্য মিত্র দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের আলোচনার প্রধান যে বিষয়টা ছিল সেটা হচ্ছে, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ যেটা আমরা বেশ কিছুকাল থেকে বলে আসছি। সেই বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেছি।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা খুব স্পষ্ট করে বলেছি যে, যে বিষয়গুলো ঐকমত্য হবে সব দলগুলোর, সেগুলো নিয়ে আমরা একটা চার্টার করতে রাজি আছি। তারপরে আমরা নির্বাচনের দিকে চলে যেতে পারি এবং বাকি যেসব সংস্কারে আমরা ঐকমত্য হবো, সেটা আমরা অবশ্যই আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচিত হয়ে আসবেন, তারা সেগুলোকে বাস্তবায়নে ব্যবস্থা নেবেন। এটাই ছিল আমাদের মূল কথা।
ওদিকে বৈঠকে দেশে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দ্রুত করণীয় কিছু বিষয়ে মতামত ও পরামর্শ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে লিখিত বক্তব্য দিয়েছে বিএনপি।

প্রধান উপদেষ্টাকে দেয়া ওই বক্তব্যে দলটি বলছে, বিএনপি মনে করে যে, জনগণের স্বার্থরক্ষা ও স্থায়ী কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য গণতান্ত্রিক শাসনের বিকল্প নেই। আর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সংস্কার একটি সদা চলমান অনিবার্য প্রক্রিয়া। বিগত ফ্যাসিবাদী পতিত সরকারের মতো ‘আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্র’ যেমন জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের অপকৌশল ছিল এখনো কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর “আগে সংস্কার পরে গণতন্ত্র” তেমনি ভ্রান্ত কূটতর্ক। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী ও কার্যকর করার মাধ্যমেই সবার জন্য উন্নয়ন সম্ভব এবং এ উদ্দেশ্য পূরণের জন্য রাষ্ট্রব্যবস্থা, আইন, নীতি, বিধানের সংস্কার অপরিহার্য। এর সবগুলো পরস্পরের পরিপূরক, কোনোটাই কোনোটার বিকল্প নয়, পরস্পর সাংঘর্ষিকও নয়।

এতে বলা হয়, দেশের ইতিবাচক পরিবর্তন বিএনপি’র হাত ধরেই এসেছে। এদেশের রাজনীতি ও অর্থনীতির ইতিহাসে প্রায় সবগুলো যুগান্তকারী সংস্কার কিম্বা ইতিবাচক পরিবর্তন বিএনপি’র হাত ধরেই এসেছে। বহুদলীয় গণতন্ত্র, সংসদীয় শাসনব্যবস্থা, তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি, স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণ, বিচার বিভাগ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন, উপবৃত্তি চালুসহ নারী ও  কারিগরি শিক্ষা, দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থান, মুক্তবাজার অর্থনীতি, কৃষি উন্নয়ন, চিকিৎসাসেবা, পল্লী বিদ্যুতায়ন, অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানি, সমুদ্র মৎস শিকার থেকে শুরু করে স্বেচ্ছাশ্রমে খাল-নদী খনন, গ্রাম সরকার, গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, সমবায়, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের বিকাশ এমন হাজারো দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা যায়।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, যখন এদেশের কোনো রাজনৈতিক দল সংস্কারের বিষয়ে কোনো কথা বলেনি তখনো শহীদ  প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা কর্মসূচি, নির্বাচন কমিশন শাক্তিশালীকরণে ২০১৬ সালের ১৮ই নভেম্বর এবং ১০ই মে ২০১৭ সালে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভিশন-২০৩০, ১৯শে ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ২৭ দফা এবং আন্দোলনরত অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে ১৩ই জুলাই ২০২৩ তারিখে ৩১ দফা রাষ্ট্রসংস্কার কর্মসূচি ঘোষণা উল্লেখযোগ্য।

এতে আরও বলা হয়, আপনাকে সমর্থন জানিয়েছি এবং আপনার ওপরই আস্থা রাখতে চাই। কিন্তু আপনার সরকারের কিছু ব্যক্তি এবং আপনাকে সমর্থনকারী বলে দাবিদার কিছু ব্যক্তি ও সংগঠনের প্রকাশ্য বক্তব্য ও অবস্থান জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। আশা করি আপনি এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্ভব উল্লেখ করে আরও বলা হয়, আমরা আগেও বলেছি এবং এখনো বলতে চাই যে, দেশের জনগণকে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার যে মহান দায়িত্ব আপনার ওপর অর্পিত হয়েছে-যত দ্রুত সম্ভব আপনি তা পালন করবেন। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য যেসব আইন, বিধি-বিধান সংস্কারে এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহে যেসব পরিবর্তন জরুরি তা সম্পন্ন করার মাধ্যমে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্ভব বলে আমরা মনে করি। এ ব্যাপারে ইতিপূর্বে আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে প্রদত্ত আপনারই আশ্বাস অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য আমরা আপনার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা এনআইডি প্রকল্প নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখার এবং নির্বাচনী এলাকা পুনঃনির্ধারণের বিষয়ে আইনি জটিলতা দ্রুত নিরসনেরও প্রস্তাব করছি। একইসঙ্গে পতিত ফ্যাসিবাদী দল ও সেই দলীয় সরকারের সঙ্গে যারাই যুক্ত ছিল তাদের বিচার দ্রুত করে রাজনীতির ময়দানকে জঞ্জালমুক্ত করার, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের ক্ষতিপূরণ ও সুচিকিৎসার দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার এবং দ্রব্যমূল্য ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমে গতিশীলতা আনয়নের অধিকতর উদ্যোগ নেয়ার জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। একইসঙ্গে ১/১১’র অবৈধ সরকার এবং পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা অনতিবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি পুনর্ব্যক্ত করছি।

বিএনপি বলছে, আমরা আপনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সকল ইতিবাচক কর্মপ্রয়াস সমর্থন প্রদান অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত পুনর্ব্যক্ত করে প্রয়োজনীয় সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ যথাশিগগিরই ঘোষণার মাধ্যমে জনমনে সৃষ্ট সকল বিভ্রান্তি অবসানের আহ্বান জানাচ্ছি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d