Trending

৯ মাসে পোশাক রপ্তানির ১২ বিলিয়ন ডলার আটকা

দরকষাকষিতে বাড়তি সুবিধা নিচ্ছেন ক্রেতারা মূল্য পরিশোধে বাড়তি সময় নিচ্ছেন অনেকে

যথাসময়ে রপ্তানি আয় প্রত্যাবাসন না হওয়ায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা আটকে আছে। গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত পোশাক খাতের প্রায় সাড়ে বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেশে আসেনি। যে মুহূর্তে দেশে ডলারের তীব্র সংকট চলছে, সে সময় এত বড় অঙ্কের রপ্তানি আয় প্রত্যাবাসন না হওয়ায় নীতিনির্ধারকরা উদ্বিগ্ন। 

পোশাক খাতের রপ্তানিকারকরা বলছেন, অন্য সময়ে রপ্তানি আয়ের কিছু অংশ আসতে দেরি হলেও এবারকার বিষয়টি একেবারেই ব্যতিক্রম।

প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা প্রায় ৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছিল। এর মধ্যে ব্যাংকিং চ্যানেলে মোট সাড়ে ২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে এসেছে। বাকি সাড়ে বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেশে পৌঁছেনি।

রপ্তানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এমনিতে রপ্তানির কিছু অংশ দেশে আসে না। কারণ রপ্তানির পর অনেক সময় ক্রেতারা বিভিন্ন অজুহাতে পণ্যমূল্যের ওপর ডিসকাউন্ট দাবি করে। সাধারণত বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ শতাংশ ডিসকাউন্ট মেনে নেয়। এর বেশি ডিসকাউন্ট পেতে গেলে বাংলাদেশ ব্যাংক গঠিত কমিটির অনুমোদন নিতে হয়। ঐ কমিটিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি ছাড়াও তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএর প্রতিনিধি থাকে। রপ্তানিকারকের যুক্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক সন্তুষ্ট হলেই কেবল ডিসকাউন্ট অনুমোদিত হয়। রপ্তানিকারকরা বলছেন, রপ্তানির যে অর্থ আসেনি, সেটার মধ্যে ডিসকাউন্টের অর্থও আছে। তবে সেটি একেবারেই সামান্য।

গত কয়েক দিনের অনুসন্ধানে জানা গেছে, রপ্তানি আয় প্রত্যাবাসিত না হওয়ার কারণ বহুবিধ। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে—ক্রেতাদের দেওয়া এলসি কিংবা চুক্তির শর্ত। একসময় ক্রেতারা রপ্তানি আয় প্রত্যাবাসনের জন্য ৬০ থেকে ৯০ দিন সময় নিতো। এ সময়ের মধ্যে রপ্তানিকারকরা তাদের অর্থ পেয়ে যেতেন। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনেক রপ্তানিকারক সময় অনেক বাড়িয়েছেন। কোনো কোনো ক্রেতা এ সময় ১৮০ দিন পর্যন্ত নিয়ে গেছেন। রপ্তানিকারকরা বলছেন, বিদেশি ব্যাংকের একসেপটেন্স আসার পর তারা ঐ এলসির বিপরীতে ঋণ নিয়ে থাকেন। সে ঋণের সুদের হারও নিয়মিত ঋণের মতো। সুতরাং কোনো কারখানা মালিক ইচ্ছে করে এ ঋণ নিতে চান না। তবে মালিকদের মধ্যে এক জন বড় রপ্তানিকারক নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইত্তেফাককে বলেছেন, কারখানা মালিকদের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারণে এ সংক্রান্ত সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে বড় বড় কারখানা মালিকরা ক্রেতার সংখ্যা না বাড়িয়ে কারখানার সক্ষমতা বাড়িয়েছেন। তারা অনেক কম দামে এবং সহজ শর্তে অন্যান্য কারখানার অর্ডার নিয়ে নিচ্ছেন। এসব ক্ষেত্রে ক্রেতারা এলসি নিষ্পত্তির সময় অনেক বাড়িয়ে নিচ্ছেন। এটি মোট রপ্তানি আয়ের ওপর প্রভাব ফেলছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আগে ক্রেতারা কারখানা মালিকদের এলসি দিলেও এখন চুক্তিপত্র ইস্যু করে। এ চুক্তিপত্র মোতাবেক কারখানা মালিকরা কাঁচামাল আমদানিতে ব্যাক টু ব্যাক এলসি খোলে। পোশাক রপ্তানির পর ক্রেতা পক্ষের ব্যাংক একটি একসেপটেন্স ইস্যু করে। ওখানে বলা থাকে রপ্তানির অর্থ কবে বাংলাদেশের ব্যাংকে আসবে। অবশ্য একসেপটেন্স পাওয়ার পর রপ্তানিকারকরা তার বিপরীতে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে থাকেন। সে ঋণের সুদ সাধারণ অন্য ঋণের সুদের মতো। ক্রেতা পক্ষের ব্যাংক অর্থ পাঠালে কারখানা মালিকের ঋণের সঙ্গে সমন্বয় করে বাকিটা রপ্তানিকারককে দেওয়া হয়। 

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের মতে, রপ্তানি আয় দেরিতে আসা বা না আসার কারণে অনেক ব্যাংক অসুবিধায় পড়ে। আবার একই কারণে অনেক কারখানা মালিক নতুন এলসি খুলতে পারেন না।

এদিকে বিপুল অঙ্কের রপ্তানি আয় দেশে প্রত্যাবাসন না হওয়ার কারণে দেশের অর্থনীতি চাপের মধ্যে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রায় ৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে উদ্যোক্তারা। অবশ্য এ হিসাব রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর। একই সময়ে রপ্তানি আয় প্রত্যাবাসিত হয়েছে ২৮.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। 

হিসাবে দেখা যায়, এ সময়ে দেশে আসেনি ১২.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঐ সূত্র জানিয়েছে, বিপুল পরিমাণ রপ্তানি আয় দেশে কেন আসেনি, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম আছে কি না তা-ও দেখা হচ্ছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
toto gacor Toto Gacor bacan4d slot toto casino slot slot gacor bacantoto totogacorslot Toto gacor bacan4d login slotgacor bacan4d bacan4d toto Slot Gacor toto 4d bacan4d toto slot bacan4d slot gacor