International

দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন: চীনের সঙ্গে যুদ্ধের প্রস্তুতি যুক্তরাষ্ট্রের, মার্কিন সেনারা নিয়েছেন বিশেষ প্রশিক্ষণ

চলতি মাসের এক সকালে ৭৬৪ জন প্যারাট্রুপার সি-১৭ পরিবহন বিমানে আলাস্কায় মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে অবতরণ করেন। হাওয়াইর বিশাল দ্বীপে দুটি আগ্নেয় পর্বতের মাঝখানে ‘গ্রেট পাওয়ার ওয়ার’ অনুশীলন শেষ করে তারা সেখানে ফিরেছিলেন। এ অনুশীলন সফলভাবে করতে পেরেছেন মাত্র ৪৯২ জন। কয়েকটি সি-১৭এস বিমানের দরজায় সমস্যা ছিল। কয়েকজন সেনা প্যারাসুট নিয়ে নামতে গিয়ে গোড়ালিতে আঘাত পেয়েছেন; কেউ কেউ মাথায়ও আঘাত পান। এক তরুণ সেনা বিমান থেকে লাফ দিলেও তাঁর প্যারাসুট খোলেনি। জটিল অনুশীলনের মধ্য দিয়ে মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদস্যরা আরেকটি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন; সম্ভবত সেটা চীনের সঙ্গে।

বুধবার দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। পেন্টাগন এটাকে বলছে, ‘গ্রেট পাওয়ার ওয়ার’, যা ভয়ানক হতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। এটা বিশ্বের দুই শক্তিশালী সামরিক বাহিনী, বিশেষ করে দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশকে মুখোমুখি লড়াইয়ে নামাতে পারে। এতে উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়ার মতো আরও দুটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ মাঠে নামতে পারে। জল, স্থল, আকাশ ও মহাকাশে এ যুদ্ধে লড়বে দুই দেশ। এ জন্য সামরিক বাহিনীও সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে। মার্কিন নৌসেনারা এ জন্য প্রস্তুত আছেন। নৌবাহিনীর সদস্যরা প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় অবস্থান করছেন।

কার্যত চীনের সঙ্গে যুদ্ধের শঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। মধ্যপ্রাচ্য ও আফগানিস্তানে দুই দশক লড়াইয়ের পর মার্কিন সেনারা নিজেদের নতুন করে সংস্কার করতে চাচ্ছেন। তালেবান বা অন্য কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীর মতো নয় চীন। তাদের আছে স্যাটেলাইট, যার মাধ্যমে তারা মজুত সেনার অবস্থান চিহ্নিত করতে পারে। সেনাদের অবশ্যই শিখতে হবে কীভাব রাডারের নিচ দিয়ে উড়তে হয়।

সেনাদের প্রতিক্ষণের মাধ্যমে চাপ নেওয়ার সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে, যাতে তারা প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপাঞ্চলে দ্রুত মজুত হলে লড়াই শুরু করতে পারে। ২৫তম ইনফেন্ট্রি ডিভিশনের০ মধ্যে আছেন জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও অন্য সহযোগী দেশগুলোর সেনারা। তারা গিরিখাতে ওঠানামা করা ও আর্দ্র আবহাওয়ায় অবস্থানের অধিকতর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। 

পার্ল হারবার থেকে প্রায় ২৮ মাইল দূরে সেনাসদস্যদের নিয়ে জাহাজ সামরিক যন্ত্রপাতি নামিয়েছে। প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলে চীনের সঙ্গে লড়াইয়ে প্রয়োজন পড়বে এসব যন্ত্রপাতির। হাওয়াইয়ের আহু সৈকত থেকে খুব বেশি দূরে নয়– এমন একটি স্থানে সামরিক বাহিনীর সদস্যরা নানা মাত্রায় প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তারা সবুজ প্রাকৃতিক পরিবেশে কীভাবে ছদ্মবেশ ধারণ করে দৃশ্যের ভেতরে লুকিয়ে পড়া যায়, সে চেষ্টাও করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাট কমলা হ্যারিস ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে তাদের ভিন্নধর্মী মনোভাবের কথা জানিয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত নিয়েও তাদের দৃষ্টিভঙ্গি এক নয়। তথাপি আগামী ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে যে-ই জয়ী হন না কেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি অব্যাহত রাখবে। বেইজিং এরই মধ্যে পরিষ্কার করেছে, তারা এশিয়া অঞ্চলে তাদের প্রভাব বাড়িয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে তারা প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপগুলোর কঠিন পাহাড়ে সেনা মোতায়েনও করবে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যমটির দাবি, সবকিছু শুরু হতে পারে তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দেশটির সেনাবাহিনীকে ২০২৭ সালের মধ্যে তাইওয়ান দখল করতে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তাইওয়ানের নিজস্ব সামরিক বাহিনী রয়েছে। তবে অঞ্চলটির বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা ছাড়া আগ্রাসন ঠেকানো কঠিন হবে। মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে সেনাবাহিনীর সাড়ে ৪ লাখ সক্রিয় সেনা প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় দায়িত্বে রয়েছেন। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও ফিলিপাইন ছাড়াও আলাস্কা, হাওয়াই, ওয়াশিংটন, ওরেগন ও ক্যালিফোর্নিয়ায় সেনা মোতায়েনের কথা বলছেন তারা।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button