Trending

শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি: অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রীয় সংস্কারের দাবি জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়ায় অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও গবেষকরা। স্থানীয় সময় বুধবার (২১ আগস্ট) ক্যানবেরার পার্লামেন্ট হাউসে বাংলাদেশের ছাত্রসমাজের উদ্যোগে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও গোলটেবিল বৈঠক থেকে এই দাবি জানানো হয়। এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিচার বিভাগের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ছাত্রদের পক্ষ থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হয় এবং সমাধানের পথ নিয়ে আলোচনা করা হয়। বাংলাদেশের ছাত্রসমাজের র‍্যালি বেলা ১১টায় শুরু হয় এবং এতে অংশগ্রহণ করেন অস্ট্রেলিয়ান সাংসদরা ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিরা। এসময় সেখানকার বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন।

‘গণহত্যার বিচার ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা’ শীর্ষক শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাংলাদেশি ছাত্ররা শেখ হাসিনার সরকারের আমলে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে তাদের দাবি স্পষ্ট করেন। ছাত্ররা দাবি করেন যেনো শেখ হাসিনাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) বিচারের মুখোমুখি করা হয়। তারা উল্লেখ করেন যে, সরকারের বাহিনী কয়েক শতাধিক নিরপরাধ ছাত্র এবং ৫০টিরও বেশি শিশুকে হত্যা করেছে, যা গণহত্যার সামিল। তারা অস্ট্রেলিয়া সরকারের পূর্ণ সহযোগিতা চান যাতে হাসিনার বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া যায়।

ভিসা নিষেধাজ্ঞা ও নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছতা দাবি করে ছাত্ররা বলেন, হাসিনার সরকারের গণহত্যার সহায়কদের অস্ট্রেলিয়ায় ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হোক। গত ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি এবং শেখ হাসিনা নির্বাচন কমিশনকে দলীয়করণ করে দুর্নীতির কবলে ফেলেছেন। ছাত্রদের দাবি, বাংলাদেশে একটি নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ নির্বাচন কমিশন গঠন করা হোক। ছাত্ররা অভিযোগ করেন যে, শেখ হাসিনা বিচার বিভাগকে তার ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য ব্যবহার করেছেন। তারা একটি স্বাধীন ও ন্যায়বিচারপূর্ণ বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবি জানান। এছাড়াও শিক্ষার মান উন্নয়নে অস্ট্রেলিয়ান সরকারের সহযোগিতা চাওয়া হয়, যাতে বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ সম্ভব হয়।
অবৈধ অর্থ ফেরত আনা: ছাত্রদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি ছিলো শেখ হাসিনার পরিবার ও তার সহযোগি কর্তৃক বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য অস্ট্রেলিয়া সরকারের সহায়তা প্রদান। তারা বলেন, যদি বাংলাদেশের কোনো অবৈধ অর্থ অস্ট্রেলিয়ায় পাচার করা হয়ে থাকে, তবে তা দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

গোলটেবিল বৈঠক:
এদিকে সমাবেশের পর ক্যানবেরার পার্লামেন্ট হাউসে একটি গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে অস্ট্রেলিয়ান সাংসদদের পাশাপাশি বাংলাদেশি ছাত্ররা এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। বৈঠকের মূল আলোচনার বিষয় ছিলো মানবাধিকার লঙ্ঘন, নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতিত্ব, বিচার বিভাগের অস্বচ্ছতা এবং শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল দশা এবং সেখান থেকে উত্তরণের উপায় নিয়েও আলোচনা করা হয়।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং সরকারের পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বক্তব্য প্রদান করেন। ন্যাশনাল গার্মেন্টস ওয়ার্কারস ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন ঢাকা থেকে অনলাইনে যুক্ত হয়ে শ্রমিকদের দুর্দশা এবং সরকারের পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেন। ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি সিডনির ছাত্র মোহাম্মদ রেজাউর রহমান সাম্প্রতিক আন্দোলন এবং হাসিনার পতন নিয়ে আলোচনা করেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সাদিয়া সায়িদ ঐক্য আন্দোলনের বিভিন্ন দিক ও বিজেপির প্রোপাগান্ডার পরিণতি নিয়ে আলোচনা করেন। ড. মোবাশ্বের হাসান বিচার বিভাগ ও শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে বক্তব্য দেন। ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্টার্ন সিডনির বাংলাদেশ সোসাইটি এবং ইউনিভার্সিটি অফ নিউ সাউথ ওয়েলস বাংলাদেশ সোসাইটির নাজিয়া আহমেদ ছাত্র আন্দোলনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং অস্ট্রেলিয়ার ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন।

মেডিক্যাল সায়েন্টিস্ট শামারুহ মির্জা বাংলাদেশে ‘ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন’ (Truth and Reconciliation) কমিশনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলেন। বাংলাদেশ কমিউনিটি কাউন্সিলের তাওহিদ ইসলাম অস্ট্রেলিয়ান সংসদ সদস্যদের কাছে বাংলাদেশিদের দাবী ও প্রস্তাবসমূহের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার সিনেটর ফাতেমা পেমেন, সিনেটর ডেভিড শুবোরিজ, সিনেটর জর্ডন স্টিল-জন, সিনেটর মেহেরুন ফারুকি, সিনেটর দেভ সারমা, সিনেটর সেলডন, সিনেটর ল্যারিসা ওয়াটার, সিনেটর ডেভিড পেকক, সিনেটর লিডিয়া থ্রোপ, সিনেটর স্টেফেন মে, এমপি মাইক ফ্রি ল্যান্ডার, এমপি মারিয়া ভামাকুভা, এমপি জানিতা মাসকারান্স, এবং এমপি আবিগাল ভয়েড। এই বৈঠকটি বাংলাদেশের ছাত্রদের দীর্ঘদিনের আশা ও দাবি তুলে ধরার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ছাত্ররা আশা করছেন, অস্ট্রেলিয়া সরকারের সহযোগিতায় বাংলাদেশে একটি স্বচ্ছ, ন্যায়বিচারপূর্ণ ও উন্নত পরিবেশ সৃষ্টি হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button