Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
Bangladesh

ক্ষমতায় তার শেষদিনের যেভাবে রুদ্ধশ্বাস পরিসমাপ্তি ঘটে

এর মাধ্যমে শেখ হাসিনা তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনেরও পাট তুললেন। দেশের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রধানমন্ত্রী, সদ্য পদচ্যুত শেখ হাসিনা যখন ভারতে পালাচ্ছেন, ছাত্র-জনতা তখন গণভবনে পৌঁছেছেন।

ক্ষমতায় তার শেষদিনের যেভাবে রুদ্ধশ্বাস পরিসমাপ্তি ঘটে

এর মাধ্যমে শেখ হাসিনা তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনেরও পাট তুললেন। দেশের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রধানমন্ত্রী, সদ্য পদচ্যুত শেখ হাসিনা যখন ভারতে পালাচ্ছেন, ছাত্র-জনতা তখন গণভবনে পৌঁছেছেন।

ক্রমশ চাপ বাড়ছে। বল ততদিনে শিক্ষার্থীদের কোর্টে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটা অংশ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। সর্বশেষ প্রতিরক্ষা বাহিনীও তাদের জবাব দিয়ে দিয়েছে: দেশের স্বার্থে তারা জনগণের সঙ্গে আছে।

তারপরও সে সকালটা ছিল আর দশটা সকালের মতো। অবশ্য জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে আন্দোলন শুরু হওয়ার আগের দিনগুলোর মতো নয়।

আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ততদিনে চারদিকে টেনশান, ঝুঁকি। দেশ-বিদেশে সবাই যেন একটা শেষ দেখার অপেক্ষায়।

কিন্তু তিনি ভাবেননি ওই দিন চলে এসেছে।

৫ আগস্টও তিনি ভোরেই ঘুম থেকে ওঠেন। অবশ্য আগের রাতে তার কম ঘুম হয়েছিল, দেরিতে শুয়েছিলেন। ফজরের নামাজে বসে দীর্ঘক্ষণ দোয়া করলেন। নামাজ শেষে এক কাপ চা নিয়ে গণভবনে নিজের অফিসে বসলেন তিনি।

চারদিকে নিরাপত্তারক্ষী। এলিট বাহিনী এসএসএফ [স্পেশাণ সিকিউরিটি ফোর্স] ও পিজিআরসহ [প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট] একাধিক বাহিনীর সদস্যরা গণভবনকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রেখেছেন।

পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীতে থাকা আস্থাভাজন পদস্থ কর্মকর্তাদের তলব শুরু করলেন তিনি।

কারফিউ বলবৎ; বাহিনীর কর্মকর্তারা কারফিউ ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেবেন বলে তাকে আশ্বস্ত করেছেন। এছাড়া জানানো হলো, রাজধানীতে প্রবেশের সব পথ বন্ধ করা হয়েছে।

তিনি নাস্তা খেলেন। ওদিন কী রান্না হবে তার খোঁজ নিলেন। রাজনৈতিক, সুশীল সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি থেকে শুরু করে সশস্ত্রবাহিনীর জাঁদরেল অফিসারদের সেদিন তার সঙ্গে দেখা করার কথা।

সেদিন ওই সময় গণভবনের বাইরে সাংবাদিক হিসেবে সরেজমিনে গিয়ে বেশ চুপচাপ পরিবেশ চোখে পড়েছিল।

আগের দিনগুলোর তুলনায় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের বাইরে নিরাপত্তা বেশি কড়া। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো, গাড়ি চলাচল করতে দেওয়া হয়েছিল। এমনকি রিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাও চলছিল।

গণভবন থেকে কয়েক মিনিট গাড়ি চালানোর দূরত্বে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর। সেখানেও কড়া নিরাপত্তার আয়োজন। সেখানে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের কর্মীদেরও দেখা মিলল।

হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে এসে দেখা গেল, গাড়িগুলোকে সাকুরা বার অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের পাশের ছোট রাস্তাটায় ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

কেউ বলেন ট্যাংক, কেউ বলেন আর্মার্ড পার্সোনাল ক্যারিয়ার (এপিসি) — সেগুলোর দেখা পাওয়া গেল হোটেলের সামনে। কিন্তু অস্বাভাবিক ব্যাপার, শাহবাগের বদলে যানগুলোকে বাংলামোটর মোড়ের দিকে তাক করে রাখা।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে ততক্ষণে বেশ মানুষজন জড়ো হয়েছেন। চানখারপুলেও অনেক ছাত্র-জনতার ভিড়। সেদিন এখানে আরেকটু পরেই অনেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনের পরিবেশ আবার চুপচাপ ছিল। মেট্রো না চলায় স্টেশনও নিঃশ্বব্দ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদরদপ্তরের সামনে গোয়েন্দা পুলিশের সশস্ত্র সদস্যরা গাড়ি ও পথচারীদের থামিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছিলেন।

কাছের মিন্টু রোড-হেয়ার রোডের মন্ত্রীপাড়াতেও নীরবতা ছেয়ে রয়েছে। কেবল প্রধান বিচারপতির বাসভবনের বাইরের দেওয়ালে কিছু কর্মীকে রং করতে দেখা যায়। আগের কয়েকদিন ওসব দেওয়ালে বিভিন্ন কথা লিখেছিলেন আন্দোলনকারীরা।

শেখ হাসিনা ততক্ষণে গণভবনে ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। বেশ কয়েকটি গোপন সূত্রের মাধ্যমে ফাঁস হওয়া খবরের ইঙ্গিত, বড় কিছু একটা ঘটতে চলেছে।

নিজের দলের লোকদের ব্যবহার করে আন্দোলন দমাতে নিরাপত্তা বাহিনীর কাছ থেকে তিনি আগের দিনটা সময় নিয়েছিলেন। কিন্তু তা-তে হিতে বিপরীত হয়। আন্দোলন আরও ছড়িয়ে পড়ে, উভয় পক্ষে আরও হতাহতের ঘটনা ঘটে।

সেই দিনই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ একদিন এগিয়ে এনে ৫ আগস্ট ঘোষণা দিয়েছিল। আর তাতেই কাজ হলো।

দুদিন আগে (৩ আগস্ট) সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের ‘অফিসার্স অ্যাড্রেস’-এ সেনাপ্রধান বলেছিলেন, সশস্ত্র বাহিনী দেশের স্বার্থে জনগণের পাশে থাকবে। তাই ২০ জুলাই থেকে মোতায়েন করা সেনা সদস্যরা দেশবাসীর ওপর গুলি চালাবে না বলেও ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

একই দিনে (৩ আগস্ট) সর্বস্তরের মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। বোঝা গিয়েছিল, গণঅভ্যুত্থান আসন্ন।

আর সবকিছুর চূড়ান্ত রূপ দেখা যায় ৫ আগস্ট।

সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে শেখ হাসিনা নিরাপত্তা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের ডেকে পাঠান। তারাও শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনায় বসতে চাচ্ছিলেন।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের মতো ঢাকার পতন হতে চলেছে — এমন গোয়েন্দা প্রতিবেদন নিয়ে তারা বৈঠকে যোগ দেন।

শেখ হাসিনা নিরাপত্তা বাহিনীকে তাদের ‘ব্যর্থতার’ জন্য ভর্ৎসনা করে জনতাকে প্রতিরোধের নির্দেশ দেন।

কিন্তু আরও রক্তপাত এড়াতে সশস্ত্র বাহিনী তার এ নির্দেশ অস্বীকার করে। এতে আরও হতাহতের ঘটনা ঘটবে বলে তারা যুক্তি দেখায়। রক্তের বন্যা বয়ে যাবে, কিন্তু তার বিনিময়ে গণভবন থেকে মানুষকে দূরে রাখার নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে না।

তারা গোয়েন্দা প্রতিবেদনে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীকে রাজধানীর প্রবেশপথে লাখ লাখ মানুষ অবস্থান করছেন বলে জানান। ইতোমধ্যে যাত্রাবাড়ী, সাভার, আশুলিয়া, উত্তরায় অনেককে হত্যা করেছে পুলিশ। সকালে মৃতের সংখ্যা প্রায় ১০০-এ পৌঁছেছে।

তখনও ডিএমপির কমান্ড সেন্টার চালু ছিল।

ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা রাজধানীতে প্রবেশ বন্ধ করতে মাঠপর্যায়ে নির্দেশ পাঠাচ্ছিলেন। কিন্তু বৈঠকে তাদের শীর্ষ কর্মকর্তা প্রধানমন্ত্রীকে জানান, ঢাকার পতন সর্বোচ্চ এক-দুই ঘণ্টার ব্যাপার।

পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছিল যে, শেখ হাসিনার সামনে তখন একটাই বিকল্প খোলা: পদত্যাগ।

প্রথমবার সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন তিনি।

অফিসারদের ধমক দিয়ে বলেন, তাদেরকে তিনি তুলে এনে আজকের এ অবস্থানে নিয়ে এসেছেন। এখন তারা সরকার ও ‘রাষ্ট্র’কে রক্ষা করতে পারছেন না।

তার প্রতিক্রিয়ায় ব্যর্থমনোরথ হয়ে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা তার বোন শেখ রেহানার সঙ্গে গণভবনের একটি ভিন্ন কক্ষে কথা বলেন। রেহানা শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বললেও তখনো তাকে মানানো যায়নি।

এরপর ফোন করা হয় যুক্তরাষ্ট্রে থাকা তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে। তিনি কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রথমে সরকারকে রক্ষা করতে তাদের ‘ব্যর্থতার’ কথা তোলেন।

কিন্তু অবশেষে জয় পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরে মায়ের সঙ্গে কথা বলেন।

শেখ হাসিনা এবার রাজি হলেন। তবে তিনি ধানমন্ডি ৩২ ও গোপালগঞ্জে গিয়ে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে চেয়েছিলেন।

কর্মকর্তারা বুঝতে পেরেছিলেন, এতে নতুন করে ঝামেলা তৈরি হবে। টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছার পর তিনি মনও পরিবর্তন করতে পারেন বলে তাদের আশঙ্কা ছিল।

তাই তারা সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।

এবার শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে চাইলেন।

জয়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, তথ্য প্রতিমন্ত্রীকে একটি সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা প্রস্তুত করতে বলা হয়। তিনি তার মোবাইল ফোনে সেটির খসড়া লিখেছিলেন। অথবা আগে থেকেই খসড়াটি তার সঙ্গে ছিল।

কর্মকর্তারা ঢাকা ও শাহবাগের আশপাশে ছাত্র-জনতার অবস্থানের নতুন তথ্য নেন। তাদের হিসাব অনুযায়ী, গণভবন থেকে জনতা কেবল ৪৫ মিনিটের দূরত্বে তখন।

তাই বক্তৃতা রেকর্ড করার প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করা হয়। জাতির উদ্দেশে শেষ ভাষণ শেখ হাসিনা আর দিতে পারেননি।

হাসিনা এরপর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে স্যাটেলাইট ফোনে ফোন করে তাকে ভারতে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি ফ্লাইট পাঠানোর অনুরোধ করেন।

মোদি সঙ্গে সঙ্গে রাজি হন।

কিন্তু দ্রুতই আবার ফোন করে মোদি জানান, কোনো আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া ছাড়া বিমান পাঠালে তা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হবে। এতে তার প্রস্থানের ওপরও প্রভাব পড়বে।

শেষ পর্যন্ত তাড়াহুড়া করে বাক্স-প্যাটরা গোছাতে হলো।

প্রথমে ৪টি স্যুটকেস নিয়ে হেলিকপ্টারে, তারপর বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর পরিবহন বিমান দিয়ে ভারতের দিকে যাত্রা।

এর মাধ্যমে শেখ হাসিনা তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনেরও পাট তুললেন।

শীঘ্রই গণভবন ও আশপাশের এলাকা থেকে সেনাপ্রহরা প্রত্যাহার করা হলো।

দেশের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রধানমন্ত্রী, সদ্য পদচ্যুত শেখ হাসিনা যখন ভারতে পালাচ্ছেন, ছাত্র-জনতা তখন গণভবনে পৌঁছেছেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacantoto4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d toto
slot toto
bacan4d
bacan4d
togel online
Toto Slot
saraslot88
Bacan4d Login
bacantoto
Bacan4d Login
bacan4d
bacan4drtp
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot maxwin
slot bacan4d
slot maxwin
bacan4d togel
bacan4d login
bacan4d login
bacan4d login
bacantoto 4d
slot gacor
bacansport
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot77 gacor
JAVHD
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
gacor slot
slot gacor777
slot gacor bacan4d
bacan4d
bacansport
toto gacor
bacan4d
bacansports login
slot maxwin
slot dana
slot gacor
slot dana
slot gacor
bacansports
bacansport
bacansport
bacansport
bawan4d
bacansports
bacansport
slot gacor
judi bola
slot maxwin
slot maxwin
bacansport
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot demo
slot gacor
slot gacor
slot gacor
toto slot
slot gacor
demo slot gacor
slot maxwin
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot toto