Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
Trending

বন ধ্বংস করে গড়ে উঠছে কারখানা, মিরসরাইয়ের আশঙ্কাজনক বাস্তবতা

বন বিভাগের সুস্পষ্টভাবে সতর্ক করা সত্ত্বেও তৎকালীন সরকার ২০১৬ সালে বিশাল অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রকল্পটি অনুমোদন করে। এরপর পর থেকেই শুরু হয় পরিবেশের ধ্বংসযজ্ঞ।

চট্টগ্রামের ২২,৩৩৫ একর সংরক্ষিত বনাঞ্চলে গড়ে ওঠা মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল, যা এখন জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (এনএসইজেড) নামে পরিচিত, এর জন্য এপর্যন্ত ৫.৫ কোটিরও বেশি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এর মধ্যে ৮৫৩ একর উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ বন ধ্বংস করা হয়েছে।

এই শিল্পাঞ্চলে ১৫৫টি কোম্পানি থেকে ১৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেলেও, এর পরিবেশগত ক্ষতি বিপুল। প্রাকৃতিক আবাসস্থল হারানোর ফলে প্রায় পাঁচ হাজার চিত্রা হরিণ, অসংখ্য উভচর, সরীসৃপ এবং ১০০টিরও বেশি প্রজাতির পাখি হয় প্রাকৃতিক আবাস্থল ছেড়ে গেছে অথবা মারা পড়েছে। বন বিভাগ কর্তৃক ১৯৬৭ সাল থেকে গড়ে তোলা এই সবুজ বেষ্টনী একসময় গেওয়া, কেওড়া, ঝাউ, বাইন এবং গরান গাছে পরিপূর্ণ ছিল। কিন্তু এখন তা কারখানা, ধুলাবালি এবং ভেঙে পড়া বাস্তুতন্ত্রের এক ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছে।

বন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ৮ কোটি চারাগাছ রোপণ করা হয়েছিল, যার মধ্যে প্রায় ৫.৫ কোটি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এই গাছগুলো একসময় ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রশস্ত একটি সবুজ বেষ্টনী তৈরি করেছিল, যা পাঁচ লাখেরও বেশি উপকূলবাসীকে ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাস থেকে সুরক্ষা দিত।

এখন প্রাকৃতিক আব্বাস হারানো পাখিরা বাসা বাঁধে বৈদ্যুতিক খুঁটিতে, বন্যপ্রাণীরা আশেপাশের গ্রামে ঢুকে মারা যাচ্ছে, আর গবাদিপশুর ঐতিহ্যবাহী চারণভূমিও বিলীন হয়ে গেছে।

পরিবেশ আইন উপেক্ষা

বন বিভাগের সুস্পষ্টভাবে সতর্ক করা সত্ত্বেও সরকার ২০১৬ সালে প্রকল্পটি অনুমোদন করার পর থেকে এই ধ্বংসযজ্ঞ শুরু হয়। তখন থেকেই বুলডোজার গাছ সরিয়ে রাস্তা ও শিল্প কমপ্লেক্স তৈরি করছে। সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে এখনও গাছ কাটা হচ্ছে এবং অনুমোদনহীনভাবে মাছ চাষ করা হচ্ছে। এগুলো সংরক্ষিত বনের বাণিজ্যিক ব্যবহার নিষিদ্ধকারী পরিবেশ সুরক্ষা আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।

কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন যে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মৌখিকভাবে ইজারা দেওয়া বনভূমি থেকে আরও ১ কোটি গাছ কেটে ফেলা হতে পারে। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো ভূমি ভরাটের জন্য বঙ্গোপসাগরের সন্দ্বীপ চ্যানেল থেকে বালু উত্তোলন করছে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন এটি দ্বিতীয় পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটাতে পারে।

এনএসইজেড-এর প্রকল্প পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ফারুক নিশ্চিত করেছেন যে এক হাজার একর জমি ১০ ফুট উঁচু করতে ১০ মিলিয়ন ঘনমিটার বালুর প্রয়োজন।

নীরবে বলি হওয়া একটি বন

বন আইন, ১৯২৭ অনুযায়ী, ২০১৩ সালের মে মাসে এই সবুজ বেষ্টনীকে আইনত সংরক্ষিত বন ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু আনুষ্ঠানিক গেজেট প্রজ্ঞাপন জারির আগেই, ২০১৪ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার পরিকল্পনা ঘোষণা করে। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের এই উপকূলীয় বন – যা চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মাত্র ৬০ কিলোমিটার এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত – দ্রুতই লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়।

তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা গেছে যে, বন কর্মকর্তারা, যার মধ্যে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আরএসএম মনিরুল ইসলাম এবং প্রধান বন সংরক্ষক মো. ইউনুস আলী ছিলেন, বনভূমি অ-বন কাজে ইজারা না দেওয়ার ২০১৩ সালের সুপ্রিম কোর্টের আদেশের কথা উল্লেখ করে বারবার লিখিতভাবে এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু এসব সতর্কতাকে উপেক্ষা করা হয়।

প্রকল্পের অভ্যন্তরীণ সূত্র মতে, এটি “প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্প” হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ায় পরিবেশগত সুরক্ষার বিধিনিষেধ অবহেলা করে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আর এসব তথ্য গোপন রাখা হয়, গণমাধ্যম ও সাধারণ মানুষের কাছে।

২০১৬ সালে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ পুরোদমে শুরু হয়, এবং ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এপর্যন্ত ১৮,২৩৫ একর বনভূমি কেটে ফেলা হয়েছে। বন বিভাগকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রতিশ্রুত ৮.৮৮ কোটি টাকা এখনও অপরিশোধিত রয়েছে।

জীববৈচিত্র্যের পতন, জীবিকা হারাচ্ছে মানুষ

২০২২ সালের মার্চে সাহেরখালীতে পণ্যবাহী গাড়ির ধাক্কায় দুইটি চিত্রা হরিণ মারা পড়ে। প্রাকৃতিক বাসস্থান অদৃশ্য হয়ে যাওয়ায় অজগর, লজ্জাবতী বানর এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণী আশাপাশের গ্রামে ঢুকে পড়ার ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে দেখা যাচ্ছে। এতে কখনও তারা মারা পড়ছে, কখনোবা মানুষের হাতে বন্দি হচ্ছে। 

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, এই বনে পাঁচ হাজারের বেশি চিত্রা হরিণ, ৬২ প্রজাতির দেশীয় পাখি, ২৬ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি এবং কয়েক ডজন প্রজাতির ব্যাঙ, সাপ ও স্তন্যপায়ী প্রাণী ছিল। হরিণ সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে।

গবেষণা সংস্থা নয়া দালান-এর গবেষক মুজাহিদুল ইসলাম অনুমান করেন যে, মাত্র ২,০০০ হরিণ অবশিষ্ট আছে, যারা ক্রমেই ছোট হতে থাকা বনভূমিতে বাস করছে। তিনি বলেন, “২০১৭ সালে যখন গাছ কাটা শুরু হয়, তখন শিকারিরা ফাঁদ পেতে প্রকাশ্যে হরিণের মাংস বিক্রি করা শুরু করে।”

ভেড়া ও মহিষের পালক, যারা একসময় এই অঞ্চলে পশুচারণের মাধ্যমে ভালো উপার্জন করতেন, তারাও এখন ক্ষতিগ্রস্ত। একজন কৃষক জানান, এক সময় তার ৭০০টি ভেড়া ছিল, এখন আছে মাত্র ১৮০টি।

কয়েক বছর আগেও, এখানে পাঁচ থেকে সাত হাজার মহিষ চরে বেড়াত। প্রায় ২০০টি পরিবার মহিষের দুধ দিয়ে দই ও মিষ্টি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করত।শিল্প-কারখানাগুলো চারণভূমি দখল করায় মহিষসহ গবাদিপশুর ঘাস আর নেই এবং তাদের সংখ্যাও কমে গেছে।

বাঁধ নির্মাণের কারণে মিষ্টি পানিতে লবণাক্ততা ঢুকে পড়েছে, ফলে স্থানীয় মাছ ও কাঁকড়ার জনসংখ্যা বিপন্নপ্রায়। অথচ শত শত উপকূলীয় পরিবার এসব ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো। বড়ুয়া পাড়ার শাহাদাত হোসেন বলেন, “আমরা আগে কাঁকড়া ধরে বাজারে বিক্রি করতাম। এখন বেশিরভাগ মানুষ দিনমজুর হয়ে গেছে, নাহলে শহরে চলে যাচ্ছে।”

গুরুতর পরিবেশগত এবং জলবায়ু ঝুঁকি

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, চট্টগ্রামের ইতিমধ্যেই দূষিত উপকূল এখন আরও গুরুতর পরিবেশগত ঝুঁকির মুখে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. ইকবাল সারওয়ার বলেন, “এটি অন্তত ৪০ বর্গ কিলোমিটার এলাকার ক্লাইমেট স্থায়ীভাবে পরিবর্তন করবে। কৃষি, জীবিকা এবং স্থানীয় অর্থনীতির অপূরণীয় ক্ষতি হবে।”

পরিবেশকর্মী ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, “এই এলাকায় তিনটি প্রধান প্রাকৃতিক বাস্তুসংস্থান ছিল—ম্যানগ্রোভ, মাডফ্ল্যাটস এবং পাহাড়ি বন। তার মধ্যে দুটো ইতোমধ্যেই ধ্বংস হয়েছে। এখন শুধুমাত্র বারৈয়াঢালা পাহাড়ি বন টিকে আছে। এই উপকূলীয় ঢাল ছাড়া, এই অঞ্চলটি ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাসের মোকাবিলায় অনেক বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।”

কার্বন বাণিজ্যের সম্ভাবনাও হাতছাড়া

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বন ও পরিবেশবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের গবেষক ড. কামাল হোসেনের মতে, মিরসরাইয়ে ধ্বংস হওয়া ম্যানগ্রোভ বন প্রতিবছর পরিবেশগত সেবা হিসেবে আনুমানিক ৫৩.৬ মিলিয়ন ডলারের সমমূল্যের সেবা দিত—যার মধ্যে ছিল কার্বন শোষণ, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ।

এই বনের ধ্বংস শুধুমাত্র পরিবেশের জন্যই নয়, অর্থনৈতিক দিক থেকেও বাংলাদেশের জন্য একটি বড় ক্ষতি বয়ে এনেছে। ইউরোপীয় কার্বন বাজারের বর্তমান হার অনুযায়ী, কেবল মিরসরাইয়ের এই ম্যানগ্রোভ বন থেকেই বাংলাদেশ প্রতিবছর অন্তত ১৬ মিলিয়ন ডলার কার্বন ক্রেডিট আয়ের সুযোগ পেত।

এই হারানো সম্ভাবনা বিশেষজ্ঞদের মতে আন্তর্জাতিক কার্বন বাণিজ্য বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান আরও দুর্বল করেছে।

আরও বন হুমকির মুখে

নতুন নির্মিত বাঁধের রাস্তার পাশে এখনও কিছু বনাঞ্চলের অস্তিত্ব দেখা যায়—তবে সেটাও বেশি দিন নয়। ইছাখালী এবং শাহেরখালী এলাকায় ড্রেজার এবং এক্সকেভেটর দিয়ে জমি পরিষ্কার করা এবং মাছের খামারের জন্য পুকুর খনন করতে দেখা গেছে।

বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী এক শ্রেণির ব্যক্তি ইজারা না নিয়েই অবৈধভাবে বনভূমি দখল করে মাছের ঘের নির্মাণ করছেন। এসব কার্যক্রমে কিছু বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) কিছু কর্মকর্তাও মদত দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

বেজার ব্যাখ্যা

বেজার দাবি, তাদের মহাপরিকল্পনায় বনের বাফার এবং খোলা জায়গা রাখার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত আছে এবং তারা পরিবেশগত ও সামাজিক প্রভাব মূল্যায়ন করেছে। তবে তারা স্বীকার করেছে, বনভূমি পরিষ্কারের দায়িত্ব আলাদা আলাদা কোম্পানির ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।

টিবিএসকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বেজা বলেছে: এনএসইজেড  থেকে ১৫-২০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়, জাতীয় জিডিপি বৃদ্ধিতে ১-১.৫% অবদান এবং ১৪ লাখ প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই প্রকল্পে ২৩০ কেভি গ্রিড লাইন, পানি পরিশোধন প্ল্যান্ট এবং স্টর্ম ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক নির্মাণের কাজ চলছে।

কিন্তু বন ধ্বংস বা জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি সম্পর্কে সরাসরি প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকার করেছে বেজা।

চট্টগ্রাম উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) বেলায়েত হোসেন বলেন যে, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) বন ধ্বংস না করেও অর্থনৈতিক অঞ্চলটি গড়ে তুলতে পারত। “এলাকায় প্রচুর পরিমাণে ফাঁকা ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি আছে। সরকার সেই জমিটি প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করতে পারত, যেমনটি অতীতে অন্যান্য অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য করা হয়েছে,” তিনি বলেন।

তিনি আরও যোগ করেন, “এই বছরের ৮ এপ্রিল, আমরা বেজাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ৪,১০৪ একর বনভূমি ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছি—যেখানে কোনো অবকাঠামো এখনো তৈরি হয়নি। আমরা একটি ইতিবাচক সাড়া পাব বলে আশা করছি।”

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacantoto4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d toto
slot toto
bacan4d
bacan4d
togel online
Toto Slot
saraslot88
Bacan4d Login
bacantoto
Bacan4d Login
bacan4d
bacan4drtp
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot maxwin
slot bacan4d
slot maxwin
bacan4d togel
bacan4d login
bacan4d login
bacan4d login
bacantoto 4d
slot gacor
bacansport
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot77 gacor
JAVHD
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
gacor slot
slot gacor777
slot gacor bacan4d
bacan4d
bacansport
toto gacor
bacan4d
bacansports login
slot maxwin
slot dana
slot gacor
slot dana
slot gacor
bacansports
bacansport
bacansport
bacansport
bawan4d
bacansports
bacansport
slot gacor
judi bola
slot maxwin
slot maxwin
bacansport
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot demo
slot gacor
slot gacor
slot gacor
toto slot
slot gacor
demo slot gacor
slot maxwin
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot toto