Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
USA

ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের গুরুত্ব

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বাকি আর মাত্র ১৩ দিন। নির্বাচনের আগে প্রচারে ব্যস্ত প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কমলা হ্যারিস। শেষ মুহূর্তের প্রচারে দোদুল্যমান ও গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যগুলোর দিকেই নজর দিচ্ছেন তারা। কারণ মার্কিন নির্বাচন পদ্ধতি অন্য গণতান্ত্রিক দেশগুলোর নির্বাচনের মতো নয়। এতে সরাসরি জনগণের ভোটে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন না। এখানে ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ নামে এক পদ্ধতিতে হয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। খবর বিবিসি অনলাইনের। 
‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ কি? ॥ মার্কিন নির্বাচনে জনগণ মূলত পছন্দের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে ভোট দিয়ে একটি নির্বাচকম-লী নির্বাচিত করে। এই নির্বাচকম-লীই প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কাজটি করে। আর এই নির্বাচকম-লীই ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ নামে পরিচিত। ইলেক্টোরাল কলেজের মোট ভোটসংখ্যা ৫৩৮। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে একজন প্রার্থীকে ২৭০টি ইলেক্টোরাল কলেজের ভোট পেতে হয়। প্রতিটি রাজ্যের নির্দিষ্টসংখ্যক ইলেক্টোরাল ভোট রয়েছে। যেমন ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে রয়েছে সর্বোচ্চ ৫৫টি ইলেক্টোরাল ভোট। আবার আলাস্কা, সাউথ ডাকোটা, ভারমন্টের মতো রাজ্যগুলোর প্রতিটিতে রয়েছে ৩টি করে ইলেক্টোরাল ভোট।
কীভাবে কাজ করে ইলেক্টোরাল কলেজ ॥ কোনো অঙ্গরাজ্যে কত ইলেক্টোরাল ভোট থাকবে, তা নির্ধারিত হয় সেখানে কতটি কংগ্রেশনাল ডিস্ট্রিক্ট রয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে। প্রতিটি কংগ্রেশনাল ডিস্ট্রিক্টের জন্য একটি করে ভোট এবং দুজন সিনেটরের জন্য দুটি ভোট বরাদ্দ থাকে। ক্যালিফোর্নিয়ায় ৫৩টি কংগ্রেশনাল ডিস্ট্রিক্ট রয়েছে। অন্য রাজ্যগুলোর মতোই সেখানে রয়েছে ২টি সিনেট আসন। ফলে রাজ্যটির মোট ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যা ৫৫টি। ধরা যাক, টেক্সাসে একজন প্রার্থী ভোটারদের সরাসরি ভোটের ৫০.১ শতাংশ পেয়েছেন। এর ফলে ওই রাজ্যের হাতে থাকা ৪০টি ইলেক্টোরাল ভোটের সবই সেই প্রার্থী পেয়ে যাবেন।
ইলেক্টোরাল কলেজে কারা থাকে ॥ ইলেক্টোরাল ভোট সিনেটর, নি¤œকক্ষের প্রতিনিধি, গভর্নর বা এমন কেউ দেবে না। এ জন্য একেবারে আলাদা একটি ভোটার দলকে নির্বাচন করা হয়। এটি দুই ধাপে ঠিক হয়। প্রথম ধাপটি দলগুলোর নিয়ন্ত্রণে। সাধারণ নির্বাচনের আগে দুই দলের পক্ষ থেকে তাদের মনোনীত ইলেক্টোরাল ভোটারের তালিকা জমা দেওয়া হয়, যাকে স্লেট বলে। সাধারণ নির্বাচনের সময় যখন সাধারণ ভোটারেরা প্রেসিডেন্টকে ভোট দেন, তখন তারা মূলত ইলেক্টোরাল ভোটারের এই স্লেট নির্বাচন করেন।

অধিকাংশ রাজ্যেই যে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জয়ী হন, তার দলের স্লেটটিই ইলেক্টোরাল ভোটার হিসেবে নির্বাচিত হয়। আসন্ন ৫ নভেম্বরের নির্বাচনে ক্যালিফোর্নিয়ায় যদি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন, তবে রিপাবলিকান দলের পাঠানো ইলেক্টোরাল ভোটার স্লেটটিই নির্বাচিত হবে।
ব্যতিক্রম ॥ এ ক্ষেত্রে মেইন ও নেব্রাস্কা অঙ্গরাজ্য ব্যতিক্রম। এ দুই অঙ্গরাজ্যে আনুপাতিক হারে ইলেক্টোলাল ভোটার বণ্টিত হয়।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ॥ জনগণের ভোটে নির্বাচিত ইলেক্টোরাল কলেজ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য চূড়ান্ত ভোটটি দেন। সাধারণ নির্বাচনের পর ডিসেম্বরের দ্বিতীয় বুধবারের পরের প্রথম সোমবার এই ইলেক্টোরাল ভোটারেরা সভায় বসবেন এবং প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য নিজেদের ভোটটি আলাদা ব্যালটের মাধ্যমে দেবেন। পরবর্তী ৬ জানুয়ারি এই ভোট গণনার জন্য কংগ্রেস চেম্বারে সভা অনুষ্ঠিত হবে।

বিদ্যমান ভাইস প্রেসিডেন্টের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সে সভায় ভোট গণনার পরই জানা যাবে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল। পদ্ধতি এমন হলেও সাধারণ নির্বাচনের পরপরই বিভিন্ন রাজ্যে জয়ী প্রার্থীর পরিচয় থেকেই নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল সম্পর্কে অনুমান করা যায়। কারণ সাধারণত দলগুলো এমন ব্যক্তিদেরই ইলেক্টোরাল ভোটার হিসেবে মনোনীত করেন যারা দল ও প্রার্থীর ভীষণ অনুগত।
সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পেয়েও পরাজিত হতে পারে ॥ একজন প্রার্থী সারাদেশে হয়তো কম ভোট পেয়েছেন। কিন্তু বেশ কিছু কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে তিনি প্রেসিডেন্ট হয়ে যেতে পারেন। যেমন ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটনের থেকে প্রায় ৩০ লাখ কম ভোট পেয়েও জয়ী হয়েছিলেন। আর পপুলার ভোটে জয়ী হয়েও হেরে গিয়েছিলেন হিলারি। জর্জ ডব্লিউ বুশ ২০০০ সালে আল গোরকে পরাজিত করেছিলেন, যদিও সাধারণ ভোটে তার জয়ের ব্যবধান ছিল পাঁচ লাখের বেশি।
ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতি কেন বেছে নেওয়া হয়েছিল ॥ যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান লেখা হয় ১৭৮৭ সালে। তখন বিশাল ওই দেশটিতে যোগাযোগের অভাবের ফলে জাতীয় স্তরে সাধারণ মানুষের ভোট নিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করা কার্যত অসম্ভব ছিল। সংবিধান রচয়িতারা তখন ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। তাদের যুক্তি ছিল পপুলার ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে লোকেরা তাদের স্থানীয় প্রার্থীকে ভোট দেবে। তার ফলে বড় রাজ্যগুলো আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করবে।

ছোট ছোট রাজ্যগুলো এই ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতিকে সমর্থন করে। কারণ এর ফলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়। দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো এই পদ্ধতির পক্ষ নেয় কারণ সে সময় এসব রাজ্যে দাসের সংখ্যা ছিল অনেক। দাসদের ভোটাধিকার না থাকা সত্ত্বেও আদম শুমারিতে তাদের গণনা করা হতো। এছাড়াও সংবিধান রচয়িতারা চাননি যে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বসে শুধু আইন প্রণেতারা দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করুক।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button