Bangladesh

লক্ষ কোটি টাকা পাচারে মেঘনা গ্রুপ

সামান্য লবণ বিক্রেতা থেকে দেশের অন্যতম সেরা উদ্যোক্তা মেঘনা গ্রুপের মালিক মোস্তফা কামাল। পরিশ্রম করেই ছোট থেকে বড় হয়েছেন। তাঁর সাফল্য আর তরতর করে ওপরে উঠে যাওয়ার গল্প রূপকথাকেও হার মানায়। এটি হচ্ছে মোস্তফা কামালের মুদ্রার এপিঠ।

তবে অন্য পিঠে টাকা পাচার, শুল্ক ফাঁকি, কারসাজি, জালিয়াতিসহ নানা অপকর্মের সহস্র উদাহরণ। সততার ভাবমূর্তি তৈরি করে ভালো উদ্যোক্তার আড়ালে দুর্নীতি আর অনিয়মকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন এই শিল্পপতি। খোদ সরকারি দপ্তরের তথ্য-উপাত্তই বলছে, ৭০টি শিল্পের মহীরুহের মালিক মোস্তফা কামালের টাকার কুমির হওয়ার নেপথ্যে আসলে অবৈধ আয়। টাকার অঙ্ক শুনলে যে কারো মাথা ঘুরে যাওয়ার কথা! বলা হচ্ছে, গত ২০ বছরে তিনি অন্তত এক লাখ কোটি টাকা পাচার করেছেন, যার মধ্যে অন্তত ৮০ হাজার কোটি টাকাই আন্ডার ইনভয়েসিং।

আর হাজার হাজার কোটি টাকার শুল্ক-কর ও ভ্যাট ফাঁকি তো রয়েছেই। টাকা পাচারের বিষয়টি উচ্চতর তদন্তের জন্য একটি অভিযোগ জমা পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন—দুদকে। একটি গোয়েন্দা সংস্থা, দুদক ও এনবিআরের তৈরি নথিপত্র থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

মেঘনা গ্রুপের অনিয়ম ও জালিয়াতির বিস্তারিত তুলে ধরে তৈরি গোয়েন্দা প্রতিবেদনটি এনবিআরকে দেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।

সংস্থার পরিচালক এয়ার কমোডর মো. কামরুল এরসাদ মতিনের সই করা প্রতিবেদনটি গত ২০ জুন এনবিআর চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো হয়। তাতে বলা হয়েছে, মোস্তফা কামাল ২০০০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ২১ বছরে আমদানিতে ৭৯ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা আন্ডার ইনভয়েসিং, শুল্কায়নযোগ্য পণ্য-মোটরযান-নৌযানের বিপরীতে বাধ্যতামূলক বীমা পলিসি এড়িয়ে গিয়ে ন্যাশনাল ইনস্যুরেন্সের এক হাজার ৫১৯ কোটি টাকা, সরকারের ভ্যাট, স্ট্যাম্প ডিউটি ও ব্যাংক কমিশনের এক হাজার কোটি টাকারও বেশি আত্মসাৎ করেছেন।

অর্থপাচার ও বিভিন্ন অনৈতিক সুবিধা নিতে গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুযোগ কাজে লাগিয়েছিলেন মোস্তফা কামাল। মেঘনা নদীর জায়গা দখল করে শিল্পপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ, অবৈধ দখলে নদী ভরাট করে নষ্ট করেছেন নদীর গতিপথ। বেসরকারি ৯টি ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে আট হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন তিনি, যার বেশির ভাগই ফেরত আসার কোনো সম্ভাবনা নেই।

শিশুখাদ্য বেশি দামে আমদানি করে শুল্কায়নের সময় কম মূল্য দেখিয়ে একদিকে সরকারের শুল্ক-কর ফাঁকি দিয়েছেন, অন্যদিকে পাচার করেছেন বিপুল পরিমাণ টাকা। এসব জায়েজ করতে আওয়ামী লীগ সরকারের কর্মীর মতো কাজ করে গেছেন। ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি বাধা দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানেও।

ব্যবসায় রাতারাতি বিপুল পরিমাণ মুনাফা অর্জনের নেশায় তিনি বেছে নিয়েছেন সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কম খরচে আমদানির পথ। আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে তিনি আমদানি করা পণ্যের প্রকৃত দামের চেয়ে কয়েক গুণ টাকা কমিয়ে দেখাতেন। এতে একদিকে সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে অন্যদিকে প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ে অনেক কম দামে পণ্য কেনায় বেশি লাভ পকেটে পুরেছেন। আর আন্ডার ইনভয়েসের টাকা পাঠিয়েছেন হুন্ডিতে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে এনবিআরকে অনুরোধ জানিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাটি।

পর্যালোচনা করে জানা যায়, অর্থপাচার ছাড়াও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে ব্যাবসায়িক লাভের হিসাব। ধরা যাক, একজন ব্যবসায়ী একটি পণ্য এক হাজার ডলারে কিনে এনেছেন; কিন্তু পণ্যটির মূল্য ঘোষণা করছেন ৫০০ ডলার। এতে সরকার ৫০০ ডলারের ওপর রাজস্ব পাবে। বাকি ৫০০ ডলারের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে। অন্যদিকে আমদানিকারক পণ্যটি সম্পূর্ণ রাজস্ব দেওয়ার পর যেই মূল্য দাঁড়াত তার সঙ্গে লাভ যুক্ত করে বিক্রি করে। এতে সরকারকে ঠকিয়ে দ্রুত অধিক টাকা উপার্জনের সুযোগ তৈরি হয়।

ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, আলোচ্য সময়ে মেঘনা গ্রুপ এক লাখ ২৮ হাজার ১৩১ কোটি ৩৩ লাখ ২১ হাজার ১২৬ টাকা শুল্কায়নযোগ্য মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে। তবে এ সময়ে আমদানি ঋণপত্র (এলসি) অনুযায়ী ইনভয়েস মূল্য দেখানো হয় ৪৮ হাজার ৩৬৮ কোটি ৪২ লাখ ৪২ হাজার ৩১১ টাকা। সে হিসাবে আমদানির আড়ালে ৭৯ হাজার ৭৬২ কোটি ৯০ লাখ ৭৮ হাজার ৮১৫ টাকার অতিরিক্ত সুবিধা নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রতিবছরই বিপুল পরিমাণে টাকা লোপাট করা হয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের প্রবণতা বেড়েছে গ্রুপটির। তবে করোনার প্রভাবে ২০২০ সালে আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাওয়ায় সে বছর কমেছে এর পরিমাণ। ২০২০ সালে এলসি ও শুল্কায়নযোগ্য মূল্যের পার্থক্য ছিল ২৬৪ কোটি টাকা। অথচ এর আগের তিন বছর এর পরিমাণ এক হাজার ২০০ কোটি টাকা থেকে এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা পর্যন্ত ছিল।

বর্তমানে বাংলাদেশে গড় শুল্কহার সাড়ে ২৯ শতাংশ। হুন্ডিতে দায় শোধে ৩ থেকে ৫ শতাংশের মতো বেশি খরচ হয় আমদানিকারকের। ফলে সাড়ে ২৯ শতাংশ শুল্ক ফাঁকি দিয়ে হুন্ডির পেছনে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ খরচ হলেও একটি বড় অঙ্কের টাকা বেঁচে যায়।

এ প্রসঙ্গে এনবিআরের সাবেক সদস্য আব্দুল মান্নান পাটোয়ারী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমদানির আড়ালে আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের সমস্যা আমাদের দেশে আছে। যে যত বেশি আমদানি করবে, তার ক্ষেত্রে এই সুযোগ তত বেশি থাকতে পারে। দ্রুত পণ্য খালাস ও অন্যান্য কার্যক্রমের জন্য কাস্টমসও সব আন্ডার ইনভয়েসিং ধরতে পারে না। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় দায় থাকে। যখন আমদানিকারক এলসি খোলে তখন প্রকৃত মূল্য যাচাই করে ইনভয়েসের সঙ্গে মিলিয়ে এলসি দেওয়ার কথা, কিন্তু ব্যাংক তা করছে না। আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে যে টাকাটা পরে পাঠায় সেটা হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানো হয়।’

আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে সরকার ও প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঠকানোর পাশাপাশি বীমা কম্পানির পলিসিও পরিশোধ করেনি মেঘনা গ্রুপ। প্রতিবেদন বলছে, শুল্কায়নযোগ্য মূল্যের বিপরীতে পলিসি নেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। সেখানে পলিসির হার ছিল ০.৯০ শতাংশ, কিন্তু শুল্কায়নযোগ্য এক লাখ ২৮ হাজার ১৩১ কোটি ৩৩ লাখ ২১ হাজার ১২৬ টাকার বিপরীতে পলিসির এক হাজার ১৫৩ কোটি ১৮ লাখ ১৯ হাজার ৮৯০ টাকা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া মোস্তফা কামালের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ৬০ থেকে ৭০টি নৌযান ও হাজার-বারো শ মোটরযানের বিপরীতে বীমা পলিসি বাধ্যতামূলক থাকলেও পলিসির ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংক কমিশনের ৬৩৮ কোটি ১০ লাখ ৩২ হাজার ৬৩০ টাকা এবং বীমা পলিসির বিপরীতে ৪ শতাংশ স্ট্যাম্প ডিউটির ২৫ কোটি ৫২ লাখ ৪১ হাজার ৩০৫ টাকা পরিশোধ করেনি মেঘনা গ্রুপ।

ব্যাংক কমিশনের ১৫ শতাংশ টাকা ভ্যাট হিসেবে পাওয়ার কথা সরকারের। তবে ভ্যাটের ৯৫ কোটি ৭১ লাখ ৫৪ হাজার ৯৮৪ টাকা খেয়ে দিয়েছে গ্রুপটি। বিভিন্ন খাতে সরকারের ভ্যাট ও স্ট্যাম্প ডিউটি বাবদ ৪০৫ কোটি টাকা পকেটে পুরে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।

তাতে আরো বলা হয়েছে, মোস্তফা কামাল তাঁর গ্রুপের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নামে করা এলসি রিফান্ড করার মাধ্যমে বীমা কম্পানি থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। পরে এই টাকা তিনি বিদেশে পাচার করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমাদের সামনে এসেছে। বিপুল রাজস্ব ফাঁকির আশঙ্কা থাকায় গুরুত্বসহকারে বিষয়টি অনুসন্ধান করা হবে।’

২০১১ সালে মেঘনা গ্রুপ প্রতি টন দুধ আমদানি করে দুই হাজার ৭০০ ডলারে। তখনকার সময়ে গড়ে তিন হাজার ৭৯০ ডলারে দুধ আমদানি করত দেশের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে শুধু ২০০৯ ও ২০১০ সালে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা শুল্ক হারায় সরকার। পাচার হয় এর চেয়েও বেশি পরিমাণ টাকা। এ নিয়ে দুদক অনুসন্ধান করতে চাইলেও অদৃশ্য কারণে তা আর এগোতে পারেনি বলে জানা যায়।

শুধু যে শুল্ক ফাঁকি আর মুদ্রা পাচার করেছেন মোস্তফা কামাল, তা-ই নয়; বরং বেসরকারি ৯টি ব্যাংক থেকে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে মেঘনা গ্রুপ। ব্যাংকগুলো হলো ব্যাংক এশিয়া, ব্র্যাক ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, মিডল্যান্ড ব্যাংক ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে বেনামে আরো পাঁচ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার অভিযোগ মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে।

মেঘনা গ্রুপের সাতটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ২৪১.২৭ একর জমি দখলের তথ্য উঠে এসেছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের তদন্তে। এর মধ্যে ৮৪.৭৭ একর জমিতে ভবন নির্মাণ, ৫.৫ একর জমিতে রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। হাইকোর্টের এক রায়ে নদী দখলকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হলেও ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ সরকারের মদদে তা উপেক্ষা করেন মোস্তফা কামাল। নদী দখলে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি গতিপথ হারাচ্ছে মেঘনা। অস্তিত্ব সংকটে নদীসংলগ্ন নিচু আবাসিক এলাকা। আনন্দবাজার এলাকায় নদীর ৫০০ ফুট জায়গা দখল করে মাটি ভরাট এবং প্রায় ৫০ একর জমি গ্রাস করেছেন তিনি। পিরোজপুরে ইউনিয়নের ছয়হিস্যা জৈনপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ১০০ বিঘা জমি এবং আষাঢ়িয়ার চর ও ঝাউচর এলাকায়  বালু ভরাট করে প্রায় ৭০০ ফুট দখলে নিয়ে সীমানাপ্রাচীর দিয়েছেন মোস্তফা কামাল।

মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইনস্যুরেন্স কম্পানিরও চেয়ারম্যান। জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইনস্যুরেন্স কম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার সময়ে এর উদ্যোক্তা পরিচালক ছিলেন মো. জাকারিয়া, তাঁর ভাই এম এফ কামাল এবং তাঁদের বোন বিউটি আক্তার, বোনের স্বামী মোস্তফা কামাল ও বাসেত মজুমদার। বর্তমানে বীমা কম্পানিটির চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন মোস্তফা কামাল এবং মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সানা উল্লাহ। ২০০০ সাল পর্যন্ত বীমা কম্পানিটি তাদের ব্যবসা কার্যক্রম ভালোভাবে পরিচালনা করলেও পরবর্তী সময়ে পরিচালকদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এই দ্বন্দ্বের ফলে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ দুই ভাগে বিভক্ত হয়।

সার্বিক বিষয়ে মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামালকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। খুদে বার্তা দিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto