Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
Hot

সমন্বিত উদ্যোগের অভাবে সংকট ভাষা চর্চা (০১)

ভাষার জন্য বাঙালির রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের ইতিহাস বিশ্বব্যাপী বাংলাকে করেছে গৌরবান্বিত। এই ভাষার রয়েছে হাজার বছরেরও বেশি সমৃদ্ধ সাহিত্য ও বিস্তৃত ইতিহাস। তবু ভাষা আন্দোলনের ৭৩ বছরেও সম্ভব হয়নি বাংলা সাহিত্যের বিপুল অংশকে অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দেওয়া। বরং কালের পরিক্রমায় সমন্বিত উদ্যোগের অভাবে দেশেই বাংলা ভাষার ব্যবহার ও চর্চা ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে। বিভিন্ন ভাষার মিশ্রণে হারিয়ে যাচ্ছে বাংলা ভাষার স্বকীয়তা ও ঐতিহ্য। দেশের সংবিধানে বাংলা ভাষার উন্নয়ন ও প্রসারে দিকনির্দেশনা থাকলেও রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে আবশ্যিক ভাষা হিসেবে বাংলার ব্যবহার এখনও নিশ্চিত হয়নি। বাংলা ভাষা ব্যবহারে সরকারের সমন্বিত উদ্যোগহীনতাই এর জন্য দায়ী। 

বাংলা ভাষা চর্চা ও উন্নয়নে সরকারের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট, বাংলা একাডেমি, ‘গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ’সহ নানা প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য জাতীয় বাজেটে সরকারের বরাদ্দও প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা। কিন্তু এর সুফল তেমন দৃশ্যমান নয়। এর মধ্যে বাংলা একাডেমি প্রতিবছর বইমেলা আয়োজনের পাশাপাশি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার প্রদানের জন্যই বহুলাংশে পরিচিত। অন্য দুই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম অনেকটা কার্যালয়ের মধ্যে ‘সীমাবদ্ধ।’ কিছু ক্ষেত্রে গবেষণার পাশাপাশি নানা প্রকাশনা থাকলেও এর প্রচার নেই। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে প্রণীত হয়নি সর্বজনীন ভাষানীতিও। 

বাংলা ভাষার বিকৃতি ও দূষণ রোধে সরকারি উদ্যোগও লক্ষণীয় নয়। উচ্চ আদালত, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ভাষা ব্যবহার হচ্ছে। দেশে অনেক ক্ষেত্রেই ইংরেজি ও হিন্দির মিশ্রণে তৈরি বাংলার ব্যবহার চলছে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পূর্ণ পাঠ্যসূচিই প্রণীত হয়েছে ইংরেজি ভাষায়। প্রাথমিক শিক্ষায় মাতৃভাষাকে গুরুত্বহীন করে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গুরুত্ব পাচ্ছে ইংরেজি ও আরবি ভাষা। হারিয়ে যেতে বসেছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নিজস্ব ভাষা অর্থাৎ মাতৃভাষাও। বিনোদনের নামে নাটক, সিনেমা ও গানে চলছে ভাষার বিকৃতি। যার প্রভাব পড়েছে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন কথাবার্তায়। আঞ্চলিক ভাষারও বিকৃতি হচ্ছে এখন খণ্ডিতভাবে। বিশ্বায়নের দোহাই দিয়ে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ভাষার বিকৃতি ঘটছে। ফলে তরুণ প্রজন্মের কাছে আগ্রহ হারাচ্ছে বাংলা ভাষা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সমকালকে বলেন, ‘বিশ্বে এখন বাংলাভাষীর সংখ্যা প্রচুর, ২৫ কোটিরও বেশি হবে; সংখ্যাবিচারে বাংলাভাষী মানুষের স্থান পঞ্চম। কিন্তু বাংলা ভাষার মর্যাদা খুবই কম। কারণ কী? কারণ হচ্ছে, আমরা সংখ্যায় অনেক ঠিকই, কিন্তু ক্ষমতায় সামান্য। অনেকটা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার মতোই; শিক্ষিতের সংখ্যা অনেক কিন্তু গুণগত মান নিম্নগামী। শিক্ষা ব্যবস্থায় বাংলা, ইংরেজি ও আরবি ভাষা ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি দুঃখজনক। মৌলিক জায়গায় বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।’

‘মাতৃভাষা ব্যবহারে দেশে এখন নীতিহীনতা চলছে’– মন্তব্য করে বিশিষ্ট এই শিক্ষাবিদ আরও বলেন, ‘দুর্দশাটা একুশে ফেব্রুয়ারির উদযাপনের ক্ষেত্রেও দৃশ্যমান। আয়োজনের অভাব নেই, কিন্তু একুশের উদযাপনে মৌলিক পরিবর্তন ঘটানো হয়েছে। সেটা হলো মধ্যরাতে উদযাপনের সূচনাকরণ। বাঙালির উৎসব শুরু হয় সকালে; ইউরোপীয়দের মধ্যরাতে। ওদের মধ্যরাত আক্রমণ করেছে আমাদের সকালবেলাকে। সাংস্কৃতিকভাবে মধ্যরাত থার্টিফার্স্ট নাইটের ব্যাপার; পহেলা বৈশাখের নয়। থার্টিফার্স্ট নাইট আর পহেলা বৈশাখ এখন আলাদা হয়ে গেছে। ইংরেজি নববর্ষ হুমকি দিচ্ছে বাংলা নববর্ষকে। হুমকির লক্ষণ একুশের উদযাপনেও দেখা দিয়েছে। হুমকি এসেছে আরও একটি। সেটি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এটি আমাদের নয়; ইউরোপের। এর সঙ্গে যোগ রয়েছে বাণিজ্যের।’ 

ভাষা নিয়ে তথ্য সংগ্রহকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা ইথনোলগের ২০২৪ সালের প্রতিবেদনে বিশ্বের ১০০টি বহুল ব্যবহৃত ভাষার তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। সংস্থাটির মতে, পৃথিবীতে ৭ হাজার ১১৭টি জীবন্ত ভাষা রয়েছে। এর মধ্যে মাতৃভাষা হিসেবে বিশ্ব-ভাষা তালিকায় বাংলার অবস্থান পঞ্চম এবং বহুল ব্যবহৃত ভাষা হিসেবে সপ্তম। ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত বাংলায় কথা বলেন ২৭ কোটি ৮২ লাখ মানুষ। ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাভাষীর সংখ্যা ৩১ কোটি ৬০ লাখে দাঁড়াবে বলে অনুমান করা হয়ে থাকে। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৫ শতাংশ অর্থাৎ ১৫০ কোটি মানুষ ইংরেজি ভাষায় কথা বলেন। 

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দিয়ে সংবিধান কার্যকর করে বঙ্গবন্ধুর সরকার। সংবিধানের আলোকে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনে দেশে আইন করা হয় ১৯৮৭ সালে। উচ্চ আদালতও সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার ও চর্চায় কয়েক দফা বাংলা ভাষানীতি প্রণয়নে তাগিদ দিয়েছেন। এর পরও ভাষানীতি প্রণয়নের বিষয়টি উপেক্ষিতই রয়েছে। সংবিধানের চারটি স্থানে বাংলা ভাষার ব্যবহারকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ৩ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা’। ২৩ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্র জনগণের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার রক্ষণের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন এবং জাতীয় ভাষা, সাহিত্য ও শিল্পকলাসমূহের এমন পরিপোষণ ও উন্নয়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন, যাহাতে সর্বস্তরের জনগণ জাতীয় সংস্কৃতির সমৃদ্ধিতে অবদান রাখিবার ও অংশগ্রহণ করিবার সুযোগ লাভ করিতে পারেন।’

হয়নি ভাষা জরিপ

স্বাধীনতার পর ভাষা জরিপ হয়নি। ১৯৬২ সালে বাংলা একাডেমি থেকে আঞ্চলিক ভাষার জরিপ শুরু হয়েছিল। ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌র উদ্যোগে জরিপের প্রশ্নমালা তৈরি করা হয়। জনগণকে এই কার্যক্রম সম্পর্কে জানাতে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছিল বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে। পরে শিক্ষাবিদ ও গবেষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুল কাইউম তিনটি উপজেলায় প্রশ্নমালার ভিত্তিতে জরিপ করেন। তিনি তখন বাংলা একাডেমির সংকলন বিভাগের সহকারী অধ্যক্ষ ছিলেন। তবে ওই কার্যক্রম পরে সফলতার মুখ দেখেনি। ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে এখন বাংলা একাডেমির পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটও কাজ করছে। কিন্তু তাদের ভূমিকা প্রকাশনার পাশাপাশি সেমিনার বা কর্মশালার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।

দেশে নেই ভাষানীতি 

বিশ্বের প্রায় ৫০টি দেশে নিজস্ব ভাষানীতি রয়েছে। ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে, রাশিয়া, চীন, জাপান, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, ইকুয়েডর ও দক্ষিণ আমেরিকার রাষ্ট্রগুলোতে নিজস্ব ভাষানীতি রয়েছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ নেপালেও রয়েছে নিজস্ব ভাষানীতি। উপযুক্ত ভাষানীতি প্রণয়ন করায় নিউজিল্যান্ডের বিলীন হতে বসা মাউরি ভাষা শুধু রক্ষাই পায়নি; এখন জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ভাষা হিসেবেও সে দেশে সুপ্রতিষ্ঠিত। ফ্রান্সে ভাষাবিষয়ক শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য রয়েছে ফরাসি আকাদেমি। প্রতিষ্ঠানটির অনুমোদিত শব্দভান্ডারের বাইরে কোনো বিদেশি শব্দ সে দেশে ব্যবহার করা যায় না। সংবাদমাধ্যম কখনও নতুন শব্দ ব্যবহার করলে কৈফিয়ত দিতে হয়। ডাচ একাডেমি নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম ও সুরিনামের ভাষা-পরিকল্পনা নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও ভাষানীতি হয়নি। 

এ ব্যাপারে ভাষাবিজ্ঞানী অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী সমকালকে বলেন, ‘বাংলা ভাষা চর্চায় সমন্বয়ের অভাব প্রকট। অনেক প্রতিষ্ঠান ভাষা চর্চায় কাজ করছে, কিন্তু তারা কী কাজ করছে, স্পষ্ট নয়। সভা-সেমিনার এবং দিবস বা মাসকেন্দ্রিক নানা আয়োজনের মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম সীমাবদ্ধ। এসব প্রতিষ্ঠানকে সমন্বিতভাবে কাজে লাগাতে হলে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ভাষা কমিশন গঠন করা জরুরি।’ তাঁর মতে, প্রস্তাবিত কমিশনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট, বাংলা একাডেমিসহ ভাষা চর্চায় যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সবটির প্রতিনিধি রাখতে হবে। এই কমিশন ৬ মাস-১ বছরের মধ্যে বাংলা ভাষাসহ মাতৃভাষা চর্চার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করবে এবং সে বিষয়ে সরকার জনগণের মতামত সংগ্রহ করবে। এর ভিত্তিতে ভাষা চর্চার চূড়ান্ত নীতি প্রণয়ন করা প্রয়োজন। তা না হলে বাংলা ভাষা চর্চায় নানা অসংগতি চলতে থাকবে। এগুলো জাতির জন্য শুভ নয়।

আদালতে বাংলা উপেক্ষিত

সংবিধান ও আইনে সর্বস্তরে বাংলা ভাষা ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা থাকলেও উচ্চ আদালতে তা যথাযথভাবে প্রতিপালিত হচ্ছে না। মামলার নথিতে উল্লিখিত বর্ণনা, সারসংক্ষেপ থেকে শুরু করে আদালতে শুনানিসহ সব কিছুই ব্রিটিশ আমলের ধারাবাহিকতায় এখনও ইংরেজি ভাষায় সম্পন্ন হয়। রায় ও আদেশ ঘোষণার পাশাপাশি তা লেখাও হয় ইংরেজিতে। বিচারক ও আইনজীবীরা বিচারকাজে ইংরেজিকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন সর্বত্র। তবে দেশের অধস্তন আদালতে শুনানির পাশাপাশি রায়, আদেশসহ সব কিছুই বাংলায় সম্পাদিত হচ্ছে। 

এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘বিচারপতিরা চাইলেই বাংলায় রায় দেওয়া সম্ভব। উচ্চ আদালতের রায়ও রয়েছে– ইংরেজির পাশাপাশি বাংলায়ও রায় দেওয়া যাবে। সদিচ্ছা থাকলে ইংরেজির কিছু বাংলা প্রতিশব্দ নিয়ে যে জটিলতা রয়েছে তা কাটানো সম্ভব।’

শিক্ষায় সংকট 

দেশের উচ্চশিক্ষায় বাংলা ভাষা পিছিয়ে পড়ছে। প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত মাতৃভাষা বাংলার ব্যবহার থাকলেও উচ্চশিক্ষায় তা উপেক্ষিত। বিশেষায়িত সরকারি অর্থাৎ প্রকৌশল, কৃষি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজগুলোতে ইংরেজি মাধ্যমেই পড়ানো হয়। গত এক যুগে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যায়েও আবির্ভূত হয়েছে ইংরেজি ভার্সন শিক্ষা ব্যবস্থা, যাতে বাংলা মাধ্যমের পাঠ্যসূচিই ইংরেজি ভাষায় পড়ানো হয় শিক্ষার্থীদের। এই স্রোত এখন রাজধানী ঢাকা ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে জেলা থেকে উপজেলায়ও। প্রায় সব উপজেলায় ইংরেজি মাধ্যমের কিন্ডারগার্টেন ও স্কুল গড়ে উঠেছে। ফলে শিক্ষা ব্যবস্থায় ইংরেজি ভাষার ব্যবহার অনেক বেড়েছে। অথচ উন্নত দেশে সব ধরনের শিক্ষায় মাতৃভাষার ব্যবহার বাধ্যতামূলক। ইংল্যান্ডের স্কুলে তাদের মাতৃভাষা ইংরেজিতে শিক্ষা দেওয়া হয়। ফ্রান্সে ফরাসি ভাষায়, চীনে চীনা ভাষায়, রাশিয়ায় রুশ ভাষায় শিক্ষা দেওয়া বাধ্যতামূলক। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যেও মাতৃভাষায় পড়ানো হয়। কিন্তু বাংলাদেশে সর্বস্তরে বাংলায় শিক্ষা দেওয়ার বিষয়টি বাধ্যতামূলক হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. এবিএম রেজাউল করিম ফকির সমকালকে বলেন, ‘শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলা ভাষা চর্চায় নৈরাজ্য চলছে। অথচ যে কোনো ভাষার চেয়ে বাংলা ভাষা গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য শিক্ষা ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিয়ে সমন্বিত ভাষানীতি প্রণয়ন করা জরুরি। বাংলা ভাষাকে সর্বোচ্চ মর্যাদা ও প্রায়োগিকতায় প্রতিষ্ঠা না করা গেলে সংকট কাটবে না।’

ভাষা চর্চায় বিকৃতি

গত দুই দশকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যম বাংলা ভাষা বিকৃতির অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। এফএম রেডিওর পাশাপাশি টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে অঞ্চলভিত্তিক নাটক-সিনেমাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও বিনোদনের অন্যতম উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বাংলা ভাষার বিকৃতি। কমেডি ধাঁচের এমন অনুষ্ঠান খুব গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারিত হচ্ছে এসব মাধ্যমে। ফলে বিকৃত উচ্চারণ, সঠিক শব্দচয়ন ও বিদেশি ভাষার সুরে বাংলা ভাষার বিকৃতি ছড়িয়েছে সর্বত্র। বাংলা ভাষার বিকৃতি রোধে হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১২ সালে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি ৯ দফা সুপারিশ দিলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। 

বরেণ্য নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ সমকালকে বলেন, ‘প্রমিত বাংলা-আঞ্চলিকতা গুলিয়ে অনেক নাটক লেখা হচ্ছে। শিল্পীরাও তাদের মতো বলেন, যার উচ্চারণও সঠিকভাবে হয় না। অথচ ইংরেজি ভাষায় উচ্চারণে ভুল হলে চারদিকে ছি ছি পড়ে যায়। এর অর্থ, আমরা নিজেরাও বাংলা ভাষার সঠিক ব্যবহারে উদাসীন। ভাষা চর্চায় আমাদের আরও সচেতন হওয়া দরকার। নয়তো বাংলা ভাষার মৌলিকত্ব হারিয়ে যাবে।’

বাংলা ভাষা চর্চায় সমন্বিত উদ্যোগ বিষয়ে জানতে চাইলে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমান সমকালকে বলেন, ‘সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ছাড়াও শিক্ষা ও আইসিটি মন্ত্রণালয়সহ সরকারের অনেক বিভাগ ও প্রতিষ্ঠান ভাষা চর্চার সঙ্গে যুক্ত। সমন্বিত উদ্যোগের বিষয়টি অবশ্যই ভালো। এটি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের বিষয়। সরকার চাইলে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’ পরে বিষয়টি সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীর নজরে নেওয়া হলে তিনি বলেন, ‘এখানে অনেক বিষয় আছে। এগুলো দেখে বলতে হবে।’ 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button