International

বিশ্বের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারিতে বিজেপি, এবার শাস্তি পাবে: বললেন অর্থমন্ত্রীর স্বামী

ভোটের মুখে নির্বাচনী বন্ড যদি বিজেপির বোঝা হয়ে ওঠে, তা হলে তার ওপর শাকের আঁটি হয়ে উঠল কেন্দ্রীয় সরকারের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা ভি অনন্ত নাগেশ্বরণের মন্তব্য। এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, বেকারত্বসহ সব সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান করা সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়।

যেদিন নাগেশ্বরণ এই মন্তব্য করলেন, তার পরের দিনই বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও লেখক পরকলা প্রভাকর জানিয়ে দেন, নির্বাচনী বন্ড শুধু দেশেরই নয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় আর্থিক দুর্নীতি। এই কেলেঙ্কারির জন্য দেশের ভোটাররা বিজেপিকে কঠিন শাস্তি দিতে চলেছে।

পরকলা প্রভাকরের অন্য পরিচয়, তিনি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের স্বামী। দেশের অর্থনৈতিক হাল নিয়ে আগেও তিনি সরকারি নীতির সমালোচনা করেছেন। তাঁর স্ত্রী নির্মলা এবার ভোটে দাঁড়াচ্ছেন না। রাজ্যসভার এই সদস্যকে তাঁর দল এবার তামিলনাড়ু থেকে লোকসভায় লড়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। নির্মলা জানিয়েছেন, দলকে বলে দিয়েছেন, ভোটে দাঁড়ানোর মতো অর্থবল তাঁর নেই।

ভোটের মুখে নাগেশ্বরণ ও প্রভাকরের জোড়া ধাক্কা বিজেপিকে বিড়ম্বনায় ফেলেছে।
নরেন্দ্র মোদিকে তাঁর ১০ বছরের শাসনকালে বারবার সমালোচিত হয়েছে কর্মসংস্থান ও বেকারত্ব নিয়ে। বারবার তিনি তাঁর মতো করে এর মোকাবিলা করে এসেছেন। এই দুই বিষয়ে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও ইনস্টিটিউট ফর হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট (আইএইচডি) তৈরি করেছে ‘ইন্ডিয়া এমপ্লয়মেন্ট রিপোর্ট ২০২৪’।

রাজধানী দিল্লিতে গত মঙ্গলবার যে অনুষ্ঠানে ওই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়, সেখানে উপস্থিত ছিলেন নাগেশ্বরণ। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতের মোট বেকার জনসংখ্যার মধ্যে শিক্ষিতদের হার ২০০০ সালে ছিল ৩৫ দশমিক ২০ শতাংশ, ২০২২ সালে তা বেড়ে হয় ৬৫ দশমিক ৭০ শতাংশ। এঁদের ৮৩ শতাংশই শিক্ষিত তরুণ–তরুণী।

রিপোর্টটি প্রকাশ করে নাগেশ্বরণ মন্তব্য করেন, সরকারই সব আর্থিক ও সামাজিক সমস্যার সুরাহা করবে এটা ভাবা উচিত নয়। সর্বত্র সরকারকে হস্তক্ষেপ করতে হবে মনে করার কারণ নেই। এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন। শিল্প ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রকে উদ্যোগী হতে হবে।

নাগেশ্বরণ বলেন, ভবিষ্যতের কথা ভেবে সরকার অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। সেটাই সরকারের কাজ। রাজনীতির কাছে সরকারের জিম্মি থাকা ঠিক নয়।
এই রিপোর্ট ও সেই সম্পর্কে সরকারের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টার মন্তব্য বিরোধীরা হাতিয়ার করতে ছাড়ছে না। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী গতকাল বুধবার বলেন, ‘ভারত জোড়ো যাত্রা শুরুর সময় থেকেই আমি বলছি বেকারত্ব ও মূল্যবৃদ্ধি দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা। এর সুরাহার দাওয়াই মোদি সরকারের কাছে আছে কি না, সেই প্রশ্ন বারবার করে আসছি। এবার তার উত্তর পেয়ে গেলাম।’

সাবেক কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম বলেন, নাগেশ্বরণ বিস্ফোরক কথা বলেছেন। এটাই যদি সরকারের কথা হয়, তা হলে বলব এখনই গদি ছেড়ে দাও। তৃণমূল কংগ্রেসের সাকেত গোখলে বলেন, এটাই মোদি কি গ্যারান্টি। প্রধানমন্ত্রী এত দিন আকাশছোঁয়া বেকারত্বের কথা অস্বীকার করে গেছেন। এখন সরকার মেনে নিল সমস্যার সমাধানের ক্ষমতা তাদের নেই।

সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির মন্তব্য, হিন্দুত্ব ও করপোরেটের যুগলবন্দী ভারতকে অচল করে দিচ্ছে। দেশের স্বার্থে এখনই এই সরকারের চলে যাওয়া উচিত।

এই রিপোর্ট অনুযায়ী, গ্রামের তরুণ–তরুণীদের মধ্যে মাত্র ১৭ দশমিক ৫০ শতাংশ নিয়মিতভাবে চাকরি করছেন। এঁদের মধ্যে ২৬ শতাংশ কলকারখানার সঙ্গে যুক্ত। নানা রকমের আর্থিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত তরুণদের হার ২০১২ সাল থেকে দশ বছরে ৪২ শতাংশ থেকে ৩৭ শতাংশে কমে দাঁড়িয়েছে। গত ১৪ বছরে বেকারত্বের হার বেড়েছে তিন গুণ।

নাগেশ্বরণের মন্তব্য নিয়ে সরকারের কেউ প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি। যেমন কেউ মন্তব্য করেননি পরকলা প্রভাকরের মন্তব্য নিয়েও। বস্তুত নির্বাচনী বন্ডকে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বাতিল করার পর প্রধানমন্ত্রী মোদি একবারের জন্যও এ নিয়ে মন্তব্য করেননি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ শুধু এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, নির্বাচনে কালোটাকা বন্ধ করাই ছিল সরকারের উদ্দেশ্য। সুপ্রিম কোর্টের দেখা উচিত এখন কী হবে।

স্পষ্টতই বন্ড নিয়ে সরকার যথেষ্ট বিপাকে। পরকলা বলেছেন, বন্ড নিয়ে এখন যতটা হইচই হচ্ছে, ভোটের সময় তা অনেক বেড়ে যাবে। এবারের নির্বাচনী লড়াই আর বিজেপি বনাম বিরোধী হবে না। হবে বিজেপি বনাম আমজনতার। ধীরে ধীরে মানুষ সব বুঝতে পারছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই কেলেঙ্কারির শাস্তি বিজেপি পাবে ভোটারদের কাছ থেকে। এর সঙ্গে যুক্ত হলো কর্মসংস্থান রিপোর্ট নিয়ে নাগেশ্বরণের মন্তব্য। ভোটের আগে বিজেপির জোড়া বিড়ম্বনা।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button