Hot

নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ফারইস্টের লোপাট দুই হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা

নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে লোপাট করা হয়েছে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ২ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা। কোম্পানির আগের পরিচালনা পর্ষদের সময় ঘটেছে এ ঘটনা। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।

ফারইস্টে অর্থ লোপাটের অভিযোগ ওঠার পর ২০২১ সালের ২৫ এপ্রিল ‘সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোম্পানি’কে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল সময়ে ফারইস্ট ইন্স্যুরেন্সের যাবতীয় কার্যক্রম নিরীক্ষা করে। গত বছরের মাঝামাঝি ওই নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা হয় আইডিআরএ কার্যালয়ে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোম্পানির প্রায় ২ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটেছে। বিগত পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম প্রভাব খাটিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ লোপাট করেছেন। এই দুর্নীতির ‘নাটের গুরু’ সাবেক পরিচালক এম এ খালেক, যিনি এখন জেলে। ২০১১ থেকে ২০২১ সাল সময়ে অর্থ লোপাটের ঘটনাগুলো ঘটে।

শেখ কবীর হোসেনের নেতৃত্বে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফারইস্টের দায়িত্ব গ্রহণ করে। এর পরই কোম্পানিটিতে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা সামনে আসে। বর্তমান পর্ষদ আইনি প্রক্রিয়ায় ওই অর্থ আদায়ে কাজ করছে।

অর্থ লোপাটের ছয় খাত
সিরাজ খান বসাক অ্যান্ড কোম্পানির নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫-২০১৭ সাল সময়ে ফারইস্টের সাবেক পর্ষদ সদস্যরা ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রতারণা করে ছয় খাত থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে ২ হাজার ৩৬৭ কোটি ৩১ লাখ ৩৮ হাজার ৭৭০ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। খাতগুলো হলো– জমি ক্রয় ও উন্নয়ন, মেয়াদি আমানত মুদারাবা টার্ম ডিপোজিট রিসিট (এমটিডিআর) জামানত, প্রতিকূল বিনিয়োগ, কোম্পানি পরিচালনায় অবহেলা ও দায়িত্বহীনতা, কোম্পানি পরিচালনায় ধারাবাহিকতা না থাকা এবং কোম্পানির কার্যক্রম পরিচালনায় নিয়ন্ত্রণহীনতা।
 এর মধ্যে জমি ক্রয় ও উন্নয়নের নামে ৬৬৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা এবং এমটিডিআর জামানত রেখে ঋণের নামে ১ হাজার ৩৩২ কোটি ৩১ লাখ ৭৯ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। 

শাহবাগ থানায় ৪ মামলা
অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ফারইস্টের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোম্পানির আইন কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট মো. জসিম উদ্দিন রাজধানীর শাহবাগ থানায় চারটি মামলা করেন। পুলিশ মামলাগুলো তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয়। তবে মামলার শুনানিতে আদালত বলেন, অপরাধের ঘটনাগুলো দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তপশিলভুক্ত এবং দুদক তদন্ত করবে। পরে চারটি মামলাই দুদকে পাঠানো হয়। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী দুদক মামলাগুলো তদন্ত করছে।

চার মামলায় আসামি ১৯ জন। সাবেক পরিচালক এম এ খালেক চার মামলাতেই প্রধান আসামি। এ ছাড়া আসামির তালিকায় রয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম এবং সাবেক এমডি ও সিইও মো. হেমায়েত উল্লাহ।

কোন মামলায় কত টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
এমটিডিআর জামানত রেখে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে শাহবাগ থানায় প্রথম মামলা হয় ২০২২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বরে। এতে ৮১৬ কোটি ২৯ লাখ ৭২ হাজার ৮৮০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে। এর পর ব্যাংক থেকে চেকের মাধ্যমে টাকা তুলে আত্মসাতের অভিযোগে বাকি তিনটি মামলা হয়। এর মধ্যে ৫৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা তুলে আত্মসাতের অভিযোগে একটি মামলা হয় ২০২৩ সালের ৩০ মার্চ। চেকের মাধ্যমে ১৩ কোটি ৭১ লাখ ৫১ হাজার টাকা এবং ১৪ কোটি ১০ লাখ টাকা তুলে আত্মসাতের অভিযোগে বাকি দুটি মামলা হয় ২০২৩ সালের ৩ মে।

আরও যা জানা যায়
ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের একটি সূত্র জানায়, অর্থ লোপাটের ঘটনায় মূল ভূমিকা রাখেন সাবেক পরিচালক এম এ খালেক। এ জন্য চার মামলাতেই অভিযুক্ত তিনি। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিচালক পদে থাকার সময় এম এ খালেক প্রভাব খাটিয়ে নিজের স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোম্পানিতে বিনিয়োগের নামে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেন। তখন আট পরিচালকই ছিলেন তাঁর ও নজরুল ইসলামের আজ্ঞাবহ। কোম্পানির জমি ক্রয়, ভবন তৈরি, বিনিয়োগ, গাড়ি কেনাকাটা, টেন্ডারসহ নানা ক্ষেত্রে দুর্নীতিতে জড়িত তারা। কোম্পানির স্বতন্ত্র পরিচালক ও শেয়ারহোল্ডার পরিচালক নিয়োগ, অডিট কমিটি গঠন সবকিছু ছিল এম এ খালেকের নিয়ন্ত্রণে। দীর্ঘ সময় তিনি নিজেই অডিট কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। কোম্পানিতে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় ছেলে শাহরিয়ার খালেদ ও রুবাইয়াত খালেদ, জামাতা মো. তানভিরুল হক, শ্যালক নুর মোহাম্মদ ডিকন এবং ম্যাকসন্স অ্যাসোসিয়েটস, ম্যাকসন্স বাংলাদেশ ও প্রাইম ফাইন্যান্সের প্রতিনিধিকে পরিচালক নিয়োগ করেন তিনি। স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে কোম্পানির সিএফও মো. হাফিজুর রহমান ও প্রাইম ফাইন্যান্সের এমডি ফরিদ উদ্দিন আহমেদসহ আজ্ঞাবহ লোকজন নিয়ে বোর্ড গঠন করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
 
যা বলছেন সংশ্লিষ্টরা
ফারইস্ট ইন্স্যুরেন্সের বর্তমান পরিচালনা পর্যদের চেয়ারম্যান শেখ কবীর হোসেন বলেন, ‘অর্থ আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, দুদকও অনুসন্ধান করছে। অনুসন্ধানে সব ধরনের সহায়তা করা হচ্ছে।’ লোপাট হওয়া অর্থ উদ্ধারেই চারটি মামলা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

ফারইস্টের আইন কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিনও বলেন, ‘কোম্পানির অর্থ উদ্ধারেই জড়িত ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। চারটি মামলার প্রতিটিতে অর্থ আত্মসাতের সুনির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে।’ আইনি প্রক্রিয়ায় অর্থ আদায় করে কোম্পানির স্বার্থ রক্ষা করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। 

এ বিষয়ে দুদক কমিশনার মো. জহুরুল হক বলেন, ‘ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ দুদকের তপশিলভুক্ত বলে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। অনুসন্ধানে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেলে দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা হবে। এর পর মামলা তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হবে। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d online