মহাবিশ্বের নিখোঁজ পদার্থ খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা

মহাবিশ্বে দৃশ্যমান পদার্থের পাশাপাশি অদৃশ্য অন্ধকার পদার্থ রয়েছে। বিশাল আকারে মহাকর্ষীয় প্রভাবের কারণে অদৃশ্য পদার্থের খোঁজ চলছে অনেক বছর ধরে। বিভিন্ন জায়গায় গ্যাস, ধুলা, তারা, গ্রহসহ বিভিন্ন মহাজাগতিক বস্তুর মতো সাধারণ পদার্থ রয়েছে। বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন, সাধারণ পদার্থ সব পদার্থের মাত্র ১৫ শতাংশ হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে এসব সাধারণ পদার্থের খোঁজ করছেন বিজ্ঞানীরা। এদের প্রায় অর্ধেক পদার্থ এখন পর্যন্ত অজ্ঞাত। মহাবিশ্বের ৬৯টি স্থান থেকে নির্গত রেডিও তরঙ্গের শক্তিশালী বিস্ফোরণের সাহায্যে গবেষকেরা নিখোঁজ পদার্থ খুঁজে পেয়েছেন।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী লিয়াম কনর বলেন, ‘আমরা একটি প্রশ্নের সঙ্গে লড়াই করছি। এসব পদার্থ আসলে কোথায় লুকিয়ে আছে? উত্তরে মনে হচ্ছে, ছায়াপথ থেকে অনেক দূরে একটি ছড়িয়ে থাকা বিশৃঙ্খল মহাজাগতিক জালে লুকিয়ে আছে বাকি পদার্থ। অন্ধকার পদার্থ একটি রহস্যময় পদার্থ, যা মহাবিশ্বের পদার্থের বেশির ভাগ অংশ তৈরি করে। আমরা জানি না কোন নতুন কণা বা পদার্থ অন্ধকার পদার্থ তৈরি করে। আমরা জানি, সাধারণ পদার্থ কী। আমরা কেবল জানতাম না যে এটি কোথায় ছিল।’
বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, নিখোঁজ অনুপস্থিত পদার্থের একটি ছোট অংশ আমাদের মিল্কিওয়েসহ ছায়াপথ ঘিরে ছড়িয়ে থাকা পদার্থের বলয়ে অবস্থান করছে। সাধারণ পদার্থ বেরিয়ন দিয়ে গঠিত। পরমাণু তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপপারমাণবিক কণা প্রোটন ও নিউট্রন দিয়ে গঠিত। যখন সুপারনোভাতে বিশাল নক্ষত্র বিস্ফোরিত হয় বা যখন ছায়াপথের ভেতরে সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল ঢেকুর তোলার মতো আচরণ করে, তখন ছায়াপথ থেকে প্রচুর পরিমাণে গ্যাস নির্গত হয়। তারা বা গ্যাস গ্রাস করার পরে বিভিন্ন উপাদান ত্যাগ করে। এ বিষয়ে বিজ্ঞানী কনর বলেন, ‘মহাবিশ্ব যদি আরও বিরক্তিকর জায়গা হতো বা পদার্থবিদ্যার নিয়ম ভিন্ন হতো তাহলে আপনি সাধারণ পদার্থ দেখতে পেতেন। এসব পদার্থ তখন ছায়াপথে পড়ে ঠান্ডা হয়ে যেত বা তারা তৈরি করত। যতক্ষণ না প্রতিটি প্রোটন ও নিউট্রন একটি তারার অংশ হতো, ততক্ষণ এ প্রক্রিয়া চলতে থাকত। যদিও বাস্তবে তা ঘটে না।’
বিভিন্ন ভৌত প্রক্রিয়ায় সাধারণ পদার্থ বিশাল দূরত্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। মহাবিশ্বের দূরদূরান্তে মহাজাগতিক মরুভূমিতে পাঠিয়ে দিচ্ছে। গ্যাসসমূহ তার স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে না বরং প্লাজমা আকারে অবস্থান করে। নিখোঁজ সাধারণ পদার্থ শনাক্তকরণ ও পরিমাপ করার জন্য ব্যবহৃত প্রক্রিয়ার সঙ্গে ফার্স্ট রেডিও বার্স্ট (এফআরবি) ঘটনা জড়িত। মহাবিশ্বের দূরবর্তী বিন্দু থেকে নির্গত রেডিও তরঙ্গের শক্তিশালী স্পন্দন জানার চেষ্টা করা হয়। যদিও এসব স্পন্দনের সঠিক কারণ এখনো রহস্যময়। ধারণা করা হয়, শক্তিশালী চৌম্বক নিউট্রন তারা থেকে এসব উত্পাদিত হয়। রেডিও তরঙ্গ ফ্রিকোয়েন্সিতে আলো ভ্রমণ করার সময় বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যে ছড়িয়ে পড়ে। এই বিচ্ছুরণের মাত্রা আলোর পথে কতটা পদার্থ রয়েছে তার ওপর নির্ভর করে।