আইএইএ ক্যামেরা অপসারণ : পরমাণু নজরদারি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে ইরান

এই বিল ইরানের মজলিসে শূরার উন্মুক্ত অধিবেশনে সর্বসম্মতভাবে পাস হয়েছে। মোট ২২১ জন প্রতিনিধি এতে উপস্থিত ছিলেন এবং সবাই এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন।
ইরান দেশটির সব পারমাণবিক স্থাপনা থেকে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-এর বসানো সব নজরদারি ক্যামেরা সরিয়ে নিয়েছে।
এক্স (সাবকে টুইটার)-এ দেয়া এক লাইনের বার্তায় এ খবর দিয়েছে ইরান অবজারভার নামের একটি সংস্থা।
এর আগে ইরানের আধা সরকারি এবং দেশটির বিপ্লবী রক্ষী বাহিনীর (আইআরজিসি) সাথে সংশ্লিষ্ট তাসনিম নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ইরান সরকার এখন থেকে আইএইএর সাথে সবধরনের সহযোগিতা স্থগিত রাখবে। ইরানের ‘গার্ডিয়ান কাউন্সিল’ বা অভিভাবক পরিষদ দেশটির সংসদ মজলিসে শূরায় পাস হওয়া এ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিলকে অনুমোদন করেছে।
অভিভাবক পরিষদের মুখপাত্র হাদি তাহান নজিফ জানিয়েছেন, এই প্রস্তাব অনুযায়ী যতদিন না ইরানের জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা নিশ্চিত হচ্ছে এবং দেশের পরমাণু বিজ্ঞানী ও স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত আইএইএর সাথে সহযোগিতা স্থগিত রাখতে ইরান সরকার বাধ্য থাকবে।
এই বিল ইরানের মজলিসে শূরার উন্মুক্ত অধিবেশনে সর্বসম্মতভাবে পাস হয়েছে। মোট ২২১ জন প্রতিনিধি এতে উপস্থিত ছিলেন এবং সবাই এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন।
বার্তাসংস্থা তাসনিম জানিয়েছে, এই বিলে বলা হয়েছে, ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠী এবং যুক্তরাষ্ট্র ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিয়ে ইরানের জাতীয় স্বার্থ ও সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি আঘাত হেনেছে। ১৯৬৯ সালের ভিয়েনা চুক্তির ৬০ নম্বর ধারার ভিত্তিতে সরকার এখন থেকে পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) এবং আইএইএর সাথে সই করা নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সবধরনের সহযোগিতা অবিলম্বে স্থগিত করবে।
এই বিল অনুযায়ী, দু’টি মৌলিক শর্ত পূরণ হলে তবেই এই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা যাবে। প্রথমত, জাতিসঙ্ঘ সনদের কাঠামোর মধ্যে এবং ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের নির্ধারিত মানদণ্ড অনুসারে, ইরানের সার্বভৌমত্ব, ভৌগোলিক অখণ্ডতা, পারমাণবিক কেন্দ্র ও বিজ্ঞানীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, এনপিটির ৪ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুসারে ইরানের স্বাভাবিক পারমাণবিক অধিকার, বিশেষ করে নিজ দেশে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অধিকার, পুরোদমে মেনে চলতে ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
বিলে আরো বলা হয়েছে, এই শর্তগুলো পূরণের নিশ্চয়তা ইরানের আণবিক শক্তি সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এবং জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন সাপেক্ষে নির্ধারিত হবে। তাছাড়া, সরকারকে প্রতি তিন মাস অন্তর এই শর্তগুলো পূরণের অগ্রগতি নিয়ে সংসদ ও জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদে প্রতিবেদন পেশ করতে হবে।
ইয়াজদের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সালেহ জোকার একটি অতিরিক্ত প্রস্তাবও আনেন। এই প্রস্তাব অনুযায়ী, এই আইন বাস্তবায়নে ব্যর্থতা বা গাফিলতির জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে, ইরানের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে রাশিয়ার প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়েছে, তেহরানের সিদ্ধান্তে ‘অবাক হওয়ার কিছু নেই।’
রাশিয়ার ভিয়েনা মিশনে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর স্থায়ী প্রতিনিধি মিখাইল উলিয়ানভ বলেছেন, ইরানের এই পদক্ষেপ ‘একেবারেই স্বাভাবিক’ এবং বর্তমান বাস্তবতার প্রতিফলন।
তিনি তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে লিখেছেন, ‘আইএইএর আওতাধীন পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অবৈধ হামলার পর এই সিদ্ধান্ত একপ্রকার অনিবার্য ছিল।’